বিশাখাপত্তনম: ভ্রমণ যেভাবে জ্ঞান বাড়ায়

3 hours ago 5

মানুষের নানারকম ক্ষুধা থাকে। কারো ভ্রমণের, কারো জ্ঞান অর্জনের, কারো শেখার। তবে আমার বরাবরই থাকে কাজের ক্ষুধা। এই কাজের ক্ষুধাই আমাকে ভ্রমণ করায়, জ্ঞান বাড়ায়, সর্বোপরি বড় হতে শেখায়। তেমনই একটি ট্যুর ছিল ওয়ানডে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে। এই মঞ্চ শুধু কাজের অভিজ্ঞতাই দেয়নি, শিখিয়েছে বিনয়, বাড়িয়েছে যোগাযোগ দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস।

ভারতের বিশাখাপত্তনম
বিসিবি-বিসিসিআই ও আইসিসির সর্বাত্মক সহায়তায় আসরের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বকাপের সংবাদ সংগ্রহের অনুমোদন মেলে। আবেদনের পর তিন দিনের মধ্যে ভারতীয় ভিসা হাতে আসে। এরপর ভারতের আগরতলা থেকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যাচের সংবাদ সংগ্রহ করতে চলে যাই অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম। পাহাড় ও সমুদ্রের মিশেলে গড়ে উঠেছে এই শহর। সমুদ্রের একেকটি ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে শহরে। প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য বিশাখাপত্তনম।

এই শহরের এসিএ-ভিডিসিএ ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ে উঠেছে পাহাড়ের কোলঘেঁষে। মাঠের চারপাশ যেমন নান্দনিক; তেমনই মাঠের ভেতরের সাজসজ্জাও ছিল দারুণ। বিশ্বকাপের রঙিন আবহ তৈরি করতে কোনো কিছুর কমতি রাখেনি কর্তৃপক্ষ। এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল প্রশ্নাতীত। কখনো কখনো বাংলাদেশ দলের আশপাশে যেতেই বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্টেডিয়ামে আমার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি তৈরি হয়েছে।

 ভ্রমণ যেভাবে জ্ঞান বাড়ায়

নয়া মুম্বাইয়ের অভিজ্ঞতা
বিশাখাপত্তনমে বিশ্বকাপ পর্ব শেষ করে মুম্বাইয়ে রওয়ানা হই। বিশ্বকাপ আসরের প্রকৃত অনুভব করতে পারি তখন থেকেই। মুম্বাইগামী বিমানে উঠতেই দেখা হয় ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর স্ত্রী সঞ্জনা গণেশের সঙ্গে। যিনি নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে টেলিভিশন শোর উপস্থাপনা করছিলেন। এরপর বিমানে পাশের সিটে বসা আইসিসির একজন ম্যাচ কমিশনার ও মিডিয়া বিভাগের একজন কর্মকর্তার সঙ্গেও পরিচয় হয়। কথা হয় ব্যক্তিগত ও ক্রিকেটীয় নানা বিষয় নিয়ে। যা জ্ঞানের পরিধিকে করেছে বিস্তৃত।

নয়া মুম্বাইয়ে এসে হয় নতুন অভিজ্ঞতা। আমরা তিনজন বাংলাদেশি গণমাধ্যমকর্মী ছিলাম একসঙ্গে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকায় নয়া মুম্বাইয়ের বেশ কিছু হোটেল আমাদের বুকিং নিচ্ছিল না। কয়েকটি হোটেলে এমন বাজে অভিজ্ঞতার পর শেষমেশ আমরা থানায় যাই; রাত তখন সাড়ে ১০টা। ব্যক্তিগত পরিচয় ও ঘটনা বলার পর থানা থেকে বলা হয়, এটি একটি প্রাইভেট ইস্যু। আমরা সহযোগিতা করতে পারবো না। কারণ তোমরা সরকারি কাজে আসোনি। নয়া মুম্বাইয়ে অনেক হোটেল আছে, তোমরাই খুঁজে দেখো, নিশ্চয়ই পাবে। অবশ্য পরে আমরা একটি হোটেল খুঁজে পেয়েছিলাম, যেখানে পরিচয়ে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি।

আরও পড়ুন
জমিদারবাড়ি ও তিন সাইকেল আরোহীর গল্প
মহামায়া ও খৈয়াছড়া ঝরনায় একদিন

 ভ্রমণ যেভাবে জ্ঞান বাড়ায়

স্টেডিয়াম থেকে শেখা
ভারতের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়াম আমাকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। পূর্ণতা দিয়েছে আইসিসির দ্বিতীয় আসরের খবর সংগ্রহের কাজে। এখানেই পরিচয় হয় ডি ওয়াই পাটিলের ছেলে বিজয় ডি পাটিলের সঙ্গে। যিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বিভিন্ন বিভাগ ও ক্রিকেট সম্পর্কে ভালোই জানেন। বিশ্বকাপের এ স্টেডিয়ামের পর্ব থেকে বেড়েছে আমার যোগাযোগ দক্ষতা। আইসিসির বিভিন্ন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ও বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। আলাপচারিতায় জেনেছি ও শিখেছি এমন কিছু, যা ক্রীড়া সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞ হতে সহায়ক হবে। তরুণ সাংবাদিক হিসেবে টানা দুটি আইসিসি আসরের খবর সংগ্রহে যোগ দেওয়ায় তারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। অবাক হয়েছেন এটা জেনে যে, আমি অনার্সপড়ুয়া এবং স্যোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক অনুসারী আছেন।

বিশেষ প্রাপ্তি
ফাইনাল ম্যাচের খবর সংগ্রহের কাজটা আমার জন্য এক বিশেষ প্রাপ্তি। প্রথমে আইসিসি থেকে অনুমোদন নাকচ করা হয়েছিল। তবে যখন জেনেছেন, একমাত্র আমিই বাংলাদেশি সাংবাদিক (নন-রাইটস হোল্ডার) হিসেবে ফাইনাল ম্যাচ সংবাদ সংগ্রহের জন্য ভারতে আছি। ফাইনালের আগের রাতে অনুমোদনের ই-মেইল পাঠানো হয়।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল ম্যাচে বেশ অবাক করা দর্শক দেখেছি। ছেলেরা এসেছেন প্রিয় ক্রিকেটার স্মৃতি মান্ধানা, হারমানপ্রীত কৌর কিংবা জেমিমা রদ্রিগেজের জার্সি পরে। যা সচরাচর বাংলাদেশে দেখা যায় না। কোনো নারী ক্রিকেটারের জার্সি পরে ছেলেরা খেলা দেখতে আসেন না। ফাইনালের হাউজফুল দর্শক যেন নারী ক্রিকেটের এক নতুন জাগরণ। দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তারা নারী ক্রিকেটকে নয় বরং ক্রিকেটকেই প্রাধান্য দিয়ে ভালোবেসে ভারতীয় দলকে সমর্থন করতে এসেছেন। তাদের দেশের প্রতি এবং ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন সত্যিই বিস্ময়কর।

এমন ভ্রমণ শুধু কাজের অভিজ্ঞতাই দেয় না; শেখায় বিনয়, যোগাযোগ আর আত্মবিশ্বাস। আমি বিশ্বাস করি, বড় মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাজ করার প্রতিটি মুহূর্ত মানুষকে শেখায় কীভাবে বড় হতে হয়। শুধু পেশাগতভাবে নয়, চিন্তায়, মননে, মানুষ হিসেবেও।

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article