নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ নিহতের ঘটনায় তিন আসামির দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মহসিনের আদালত তাদের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে, আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
আসামিরা হলেন- রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে ও প্রাইভেটকারচালক মুবিন আল মামুন (২০), মিরপুর পীরেরবাগ এলাকার রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম (২২) ও উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরী (১৯)।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক কাউয়ম খান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র নিহতের ঘটনায় তিন আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। তাদের শুধু লার্নার লাইসেন্স ছিল। এই লাইসেন্স দিয়ে সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আইনি সুযোগ নেই।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে মাতালরা এসে গাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে একজন ছাত্র মারা গেছেন। বাকি দুজন শিক্ষার্থীদের অবস্থাও ভালো না। পরে এই মাতালদের গ্রেপ্তার করে ডোপ টেস্ট করালে দুজনের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। এসব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। আশা করি, এই মামলাটি ৩০২ ধারায় টার্ন হবে এবং হত্যা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এই মামলাকে আমরা অবশ্যই ৩০২ ধারায় টার্ন করাব।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরে ৩০০ ফিট এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মুহতাসিম মাসুদ (২২) শিক্ষার্থী নিহত হন। তিনি রাজধানীর কলাবাগান থানার গ্রিনরোড এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়ার ছেলে।
গুরুতর আহত হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান খান (২২) ও অমিত সাহা (২২)। মেহেদী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এবং অমিত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত মুহতাসিম মাসুদ (২২) বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এ ঘটনায় নিহত মুহতাসিমের বাবা বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মুহতাসিম তার মোটরসাইকেলে করে দুই বন্ধুকে নিয়ে ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট এলাকায় খাওয়াদাওয়া করার জন্য আসেন। তারা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে নীলা মার্কেট মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এ সময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেটকার তল্লাশি চৌকিতে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মুহতাসিম মাসুদ মারা যান। আহত হন তার দুই সহপাঠী।
পরে তল্লাশিচৌকিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা গাড়িচালকসহ তিনজনকে আটক করে রূপগঞ্জ থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ জানায়, ওই প্রাইভেট কার থেকে একটি মদের খালি বোতল ও এক ক্যান বিয়ার পাওয়া গেছে। পরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আসামিদের ডোপ টেস্ট করা হলে তাদের মধ্যে দুজনের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। তারা হলেন- মুবিন আল মামুন (২০) ও মিরাজুল করিম (২২)।