সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দুই মন্ত্রী ‘বে অব বেঙ্গল সম্মেলন’ আয়োজনে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছে। অতিথিদের এই আয়োজনে আসতে নিরুৎসাহিত করা হতো।
দেশ-বিদেশের ৮০০ প্রতিনিধির অংশগ্রহণে তিনদিনব্যাপী ঢাকায় শুরু হচ্ছে ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ (বঙ্গোপসাগর সংলাপ)। তৃতীয়বারের মতো সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এই সম্মেলন শনিবার (১৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়ে চলবে সোমবার পর্যন্ত। এতে প্রথম দিনে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এবারের সম্মেলন হবে তৃতীয়তম। গত বছর অক্টোবরে দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর ২০২২ সালে নভেম্বরে প্রথম সম্মেলন। এবারের তৃতীয় সম্মেলন শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হবে।
আগের দুবার সিজিএসের এই আয়োজনে অতিথিদের না আসার জন্য বিভিন্ন হাইকমিশন থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জিল্লুর রহমান বলেন, বলা হতো সিজিএস সরকারবিরোধী। এমনকি বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ এশীয় বিভিন্ন দেশের অতিথিদের ফোন করে না আসার জন্য বলা হতো।
প্রথমবার ২০২২ সালে আয়োজনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমকে আয়োজনের খবর প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। দেশের ৫ থেকে ৭টি পত্রিকা ছাড়া কেউ কোনো খবর ছাপেনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশীয় অতিথিদের ফোন করে নিষেধ করত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ অনুষ্ঠানস্থলের পাশে দলবল নিয়ে এসে বসে থাকতেন।
২০২২ সালের আয়োজনের জন্য ছয় মাস আগে একটি হোটেলে বুকিং দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার চায় না বলে, তারা আয়োজনের ১৫ দিন আগে বাতিল করে দেয় বলে জানান জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, সে বছর সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আধা ঘণ্টা বসে থেকে বক্তব্য না দিয়ে চলে যান। আরেকজন সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গেট থেকেই ফিরে যান। দ্বিতীয়বারের আয়োজনে শুধু সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অংশ নিয়েছিলেন।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, এ ধরনের আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই সরকারের সমর্থন থাকে। তারা সরকারের কাছ থেকে অন্য কোনো সহায়তা চান না। সরকার যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হয়।
বর্তমান সরকারের সময়ে কোনো বাধা পাননি জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, এবার আয়োজনে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করেছে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, সম্মেলন চলবে ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। বে অব বেঙ্গলে আমাদের যে অংশীদারত্ব আছে এটা পৃথিবীর মানুষকে জানানো হয় এ ধরনের আয়োজনে। এতে বাংলাদেশও লাভবান হয়। আমরা সব সময় এ আয়োজনকে সরকারের বাইরে রাখতে চাইব। আমাদের পলিসিগুলো নীতিনির্ধারকদের জন্য। সরকারের সঙ্গে আমরা কোনো আর্থিক বিষয়ে জড়াব না।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা খুব কঠিন। গত দুবছর খুব বেগ পেতে হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে চাই। বাংলাদেশের ইস্যু টুকটাক, তবে আন্তর্জাতিক ইস্যু বেশি আসবে। অনুষ্ঠান সফল করতে সরকারের সাহায্য চাই, আমাদের আয়োজনে যাতে কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তিন দিনব্যাপী এই সংলাপে বিশ্বের ৮০টি দেশের লেখক, গবেষক, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, আমলা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। ভূরাজনীতি, অপতথ্য, মানবাধিকারসহ পাঁচটি বিষয়ে সংলাপ হবে। এতে বিভিন্ন দেশের ২০০ জন বক্তা, ৩০০ জন প্রতিনিধি এবং ৮০০ জন অতিথি থাকবেন। এই আয়োজনে শুধু নিবন্ধিত অতিথিরাই অংশ নিতে পারবেন।
এবারের আলোচনার বিষয়গুলো হচ্ছে- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অপতথ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, ভূ-রাজনীতি এবং মানবাধিকার। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৭৭টি সেশন চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান, চিফ অফ স্টাফ দিপাঞ্জলী রায় এবং প্রোগাম ডিরেক্টর সুবীর দাস প্রমুখ।