বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করাই এখন বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তারপরও আমাদের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী ও দৃঢ়। কিন্তু বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করাটা এখনও আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ১২তম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাভারের বিরুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে এ অনুষ্ঠান হয়। রাষ্ট্রপতির ও বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে গণশিক্ষা উপদেষ্টা সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন।
অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বহু শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের নব্য স্বাধীনতা। সামাজিক বৈষম্য, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, পশ্চাৎপদতা দূরীকরণ এবং সুখী-সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গড়ে তোলার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, এ অর্জনের অঙ্গীকারই বাংলাদেশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশা করে। জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। সততা, কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। নিজেদের মেধা, শিক্ষা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে বিশ্বমানের মানবসম্পদে পরিণত হতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ততদিন দেশ উন্নত হবে না যতদিন পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য, দেশের অর্থনীতির হাল ধরার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রকৃত উচ্চশিক্ষিত নাগরিক আমরা সৃষ্টি করতে না পারি।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশ ও দশের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে হবে। ভালো মানুষ, মানবিক মানুষ হতে হবে। বিশ্বসভায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে। তরুণরা এ দেশে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকারও বাকস্বাধীনতার।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক হাসান দিয়াব। তিনি বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশের নয়, এ অঞ্চলের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আশার আলো ও মডেল। বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শাখা ক্যাম্পাস চালুর মধ্যদিয়ে বৈচিত্র্যময় ছাত্র সম্প্রদায়কে বিশ্বমানের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রতিশ্রুতি ও যোগ্যতা দেখিয়েছে।
সমাবর্তনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান প্রমুখ।
ডিগ্রি পেল ৩৯৫১ জন, ১২ জনের স্বর্ণপদক অর্জন
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১২তম সমাবর্তনে মোট তিন হাজার ৯৫১ জন গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি দেওয়া হয়। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১২ গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর, চেয়ারম্যান ও উপাচার্যসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিত স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
সমাবর্তনে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ফার্মেসি বিভাগের আবু ফারহান সিয়াম, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জাবেদ হাসান, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হুমায়রা আসিমা মিম, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাশুর সাদ করিম ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আশিকুল হক।
এএএইচ/এমআইএইচএস