বর্তমান সময়ে হঠাৎ করে জ্বর, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা বা শরীরে দুর্বলতা—এই উপসর্গগুলো খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময়। এগুলোর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভাইরাল জ্বর। এটি এক ধরনের সংক্রামক জ্বর, যা ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে এবং সহজেই একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যদিও এটি সাধারণত তীব্র নয় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যায়, তবে সময়মতো সঠিক বিশ্রাম ও চিকিৎসা না নিলে জটিলতাও দেখা দিতে পারে। ভাইরাল জ্বর সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন : হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা কি বড় কোনো সমস্যার ইঙ্গিত
সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার এই সময়ে শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভ নিশ্চিত করে। চলুন দিনাজপুরের রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আকতারের কাছ থেকে জেনে নিই ভাইরাল জ্বর হলে কী খাবেন।
ভাইরাল জ্বরের সময় কী খাবেন
ভাইরাল জ্বরের সময় খাবার হতে হবে সহজপাচ্য, পুষ্টিসমৃদ্ধ ও শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী।
১. তরল খাবার ও পর্যাপ্ত পানি : গরম পানি, লেবু পানি, ডাবের পানি, ইলেকট্রোলাইট (ORS), চিকেন বা সবজি স্যুপ এগুলো ডিহাইড্রেশন রোধ করে ও শরীরে শক্তি জোগায়।
২. সহজপাচ্য ও হালকা খাবার : সেদ্ধ ভাত ও ডাল, খিচুড়ি, সেদ্ধ আলু, হালকা ভেজানো নরম রুটি, সেদ্ধ সবজি হজমে সহায়ক এবং ক্লান্ত শরীরের জন্য উপযোগী।
৩. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার : ডিম (সেদ্ধ বা হালকা পোচ), চিকেন স্যুপ, পনির, টক দই ও প্রোটিন শরীর মেরামতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ফল : কমলা, মাল্টা, লেবু, পাকা পেপে, আমলকী, কলা, বেদানা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে।
৫. টক দই ও প্রোবায়োটিক খাবার : হজম শক্তি বাড়ায় এবং পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভাইরাল জ্বরের সময় কী খাবেন না?
ভুল খাবার এই সময় শরীরের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। কিছু খাবারের কথা নিচে উল্লেখ করা হলো যা ভাইরাল জ্বরের সময় না খাওয়াই ভালো—
১. ভাজা-পোড়া ও তেলচর্বিযুক্ত খাবার : পরোটা, পেঁয়াজু, চপ, ফাস্টফুড হজমে সমস্যা করে, বমি বা গ্যাসের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. ঠান্ডা খাবার ও পানীয় : আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি, কোল্ড ড্রিংক। এগুলো কাশি ও গলা ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন : প্রতিদিনের যেসব অভ্যাস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে আমাদের অজান্তেই
৩. ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার : বিরিয়ানি, ঝাল ভুনা, আচারের মতো খাবার পাকস্থলীর সমস্যা ও অস্বস্তি তৈরি করে।
৪. চা-কফি ও ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় : এগুলো বেশি খেলে শরীরকে ডিহাইড্রেট করে দিতে পারে।
ঘরোয়া কিছু উপকারী টিপস
১. লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করুন গলা ব্যথা কমাতে।
২. আদা-লেবু বা তুলসী পাতার হালকা চা খেতে পারেন।
মনে রাখবেন, এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম।
আরও পড়ুন : শরীর ঠিক রাখতে একটি মাত্র তরল, জানুন আয়ুর্বেদ কী বলছে
ভাইরাল জ্বর হলে শুধু ওষুধ নয়, সঠিক পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সহজপাচ্য, পুষ্টিকর খাবার শরীরকে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে। এই সময় অপ্রয়োজনীয় খাবার বা অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।