ভারতের পুলিশ কর্মকর্তার ঘুষকাণ্ড, কোটি টাকা-সোনা-বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ

1 hour ago 3
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের রোপড় রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল-ডিআইজি হরচরণ সিং ভুল্লারকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। ভুল্লারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার আলোচিত এ অভিযান পরিচালনা করে সিবিআই। অভিযানে তাকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয়। একে একে বিভিন্ন ঠিকানা থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৭ কোটি নগদ টাকা, দেড় কেজি ওজনের সোনার গয়না, ২টি দামি মার্সিডিজ ও অডি গাড়ি, ২২টি ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল ঘড়ি, ট্রাক ভর্তি বিদেশি মদ ও জমিজমা সংক্রান্ত একাধিক নথি। সিবিআই কর্মকর্তারা জানান, রাজ্যের মোহালির দপ্তর থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় ভুল্লারকে হাতেনাতে ধরা হয়। তিনি মাণ্ডি গোবিন্দগড়ে এক স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিচ্ছিলেন। এর পরপরই চণ্ডীগড় ও মোহালির একাধিক স্থানে এবং এরপর সামরালা এলাকার একটি ফার্মহাউসে তল্লাশি চালায় সিবিআই দল। তল্লাশিতে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, সোনা-গয়না এবং জমিজমা সংক্রান্ত একাধিক নথি। সামরালার ফার্মহাউস থেকে উদ্ধার হয় আধা ট্রাক ভর্তি দেশি ও বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ, যা অবৈধভাবে মজুত করা হয়েছিল বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। পুরো চালানটি এসময় সিল করে দেওয়া হয়। রাতভর গণনা চলে উদ্ধার হওয়া টাকার, একাধিক মেশিনে যাচাই করা হয় নোটের পরিমাণ। বেশ কয়েকটি লকার ও আলমারিও সিল করা হয়েছে, কারণ সেখানে আরও অঘোষিত সম্পদের খোঁজ মিলেছে। সিবিআইর সূত্রে জানা গেছে, ভুল্লার রোপড় অঞ্চলের একাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত মাসিক ঘুষ আদায় করতেন। অভিযোগকারীর নাম আকাশ, যিনি মাণ্ডি গোবিন্দগড়ের এক স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী। তিনি জানান, মাসে ৫ লাখ টাকা না দিলে তার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। প্রায় ১০ দিন নজরদারি চালিয়ে সিবিআই ঘুষ লেনদেনের সময় ফাঁদ পেতে ভুল্লারকে গ্রেপ্তার করে। এই মামলায় মূল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ধরা পড়েছে কৃষাণু নামে এক ব্যক্তি, যিনি ঘুষের অর্থ আদান-প্রদানের পুরো ব্যবস্থা সামলাতেন। তার মোবাইল ও আর্থিক নথিও এখন সিবিআইয়ের হেফাজতে। ২০০৭ ব্যাচের এই আইপিএস কর্মকর্তা হরচরণ সিং ভুল্লার ২০২৪ সালের নভেম্বরে রোপড় রেঞ্জের ডিআইজি পদে যোগ দেন। তিনি সাবেক পাঞ্জাব ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ মেহল সিং ভুল্লারের ছেলে এবং সাবেক কংগ্রেস বিধায়ক কুলদীপ সিং ভুল্লারের ভাই। পাটিয়ালা ও ভিজিল্যান্স ব্যুরোর দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। শুক্রবার মোহালি আদালতে তাকে তোলা হবে বলে জানা গেছে। সিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ ও সোনার উৎস খুঁজে বের করাই এখন তদন্তের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি দেখা হচ্ছে, পুলিশের অন্য সদস্য বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ এই ঘুষচক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না। এ ঘটনায় পাঞ্জাব পুলিশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এই গ্রেপ্তার গোটা বাহিনীর জন্য একটি বড় ধাক্কা। তদন্ত যত সামনের দিকে এগোবে, আরও নাম সামনে আসতে পারে।
Read Entire Article