বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী শামীম হোসেনকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন।
সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পোস্টে তিনি লেখেন, সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে দুইটি জরিপের ফলাফল আমাদের হাতে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টার এবং বেসরকারি সংস্থা ন্যারেটিভ এই জরিপ দুইটি চালায়। জরিপে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। সোচ্চারের জরিপে অংশ নেয় ৯৯১ জন শিক্ষার্থী, আর ন্যারেটিভের জরিপে অংশ নেয় ৫২৬ জন শিক্ষার্থী। জরিপগুলোতে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের বেশ ভালোই আগ্রহ দেখা গিয়েছে। ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান আর ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে বেশ বড় অংশের ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেননি। ভোটারদের মতে, প্রার্থীদের ব্যক্তিত্ব, ভালো একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, একাডেমিয়া ও এক্টিভিজমে ব্যালেন্স, সৎ, ধার্মিক, সত্যবাদী, ভালো সংগঠক এমন প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকবেন।
এতে তিনি লেখেন, জরিপে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সাদিক কায়েমের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম হোসেন। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ৩০ থেকে ৩৪ শতাংশ ভোটারের ভোটই এখানে গেমচেঞ্জার। শামীম যদি এখান থেকে বড় একটি অংশের ভোট ক্যাচ করতে পারেন, তবে হয়তো আমরা ডাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমকটি দেখতে যাচ্ছি।
ইলিয়াস হোসেন লেখেন, শামীম হোসেনের হঠাৎ এই ব্যাপক সম্ভাবনা নির্বাচনী মাঠের অনেক হিসাব-নিকাশই ঘুরিয়ে দিয়েছে। তবে শামীমের হঠাৎ এই উত্থানের রহস্য কী?
তিনি লেখেন, শামীম হোসেন ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের ২০১৯-২০ সেশনের একজন ছাত্র। মিশুক, সদালাপী এবং ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে সে পূর্ব থেকেই বেশ পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে আনাসহ শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু দাবির বিষয়ে তার স্পষ্টভাষী বক্তব্যে অল্প দিনেই তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাকে ঘিরে আবার বেশ কিছু বিতর্কও উঠেছে। শুরুতে নিজের রাজনৈতিক অতীত অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে বাম রাজনীতির সাথে তার সম্পৃক্ততার নানা তথ্য পাওয়া যায়।
সাংবাদিক ইলিয়াস উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় মহাজোটের অন্যতম শরিক দল বাম রাজনৈতিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠন জাসদ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাদের বেশকিছু মানববন্ধন ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখাও গিয়েছে। জাসদ সেই রাজনৈতিক দল যা আওয়ামী লীগের সাথে ১৬ বছরে ৩টি পাতানো নির্বাচন, শাহবাগ, শাপলা গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের প্রতিটি অপকর্মে সহায়তা করেছে, এমনকি সর্বশেষ জুলাই মাসেও আওয়ামী লীগের সাথে যৌথভাবে মাঠে ছিল জাসদ। শামীমের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলেও ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পোস্ট পাওয়া যায় না যা বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করে, যদিও পরবর্তীতে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা দেন শামীম। তবে, শামীমের এই ব্যাখ্যার বাইরেও কিছু তথ্য হাতে এসেছে যা নিচের ছবিতে প্রমাণ রয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ এবং স্বৈরাচারের পা চাটা এসপি মাশরুরের, আওয়ামী লীগ কর্তৃক পাচার হওয়া টাকায় নির্বাচন করছে শামীম।
তিনি লেখেন, কোনোভাবেই শামীমের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দেওয়া হবে না। অরাজনৈতিক দাবি করে শামীম মূলত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার খায়েশ পূরণ করতে চায়। মীরজাফর শামীমের আমলনামা তুলে ধরলাম বাকি সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন-মেধাবী শিক্ষার্থীদের।
ইলিয়াস লেখেন, ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে কথিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শামিম হোসেন নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করলেও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে তার অংশ নেওয়ার প্রমাণ হাতে এসেছে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে বিসিএল আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন শামিম। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, কথিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বয়কটের দাবিতে বিসিএলের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন তিনি।এছাড়াও আরও বেশ কিছু আয়োজনে শামিম হোসেনকে বিসিএলের ব্যানারে অংশ নিতে দেখা গেছে।
ইলিয়াস পোস্টের শেষে লেখেন, শিক্ষার্থীদের একটি অংশের অভিযোগ, মূলত ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই শামিম নিজেকে অরাজনৈতিক পরিচয় দিয়েছেন। আশা করি মিরজাফর হতে সাবধান থাকবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠের মেধাবীরা।