মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণের দায় স্বীকার হিটু শেখের

4 hours ago 5
মাগুরায় চাঞ্চল্যকর শিশু আছিয়া ধর্ষণের অভিযুক্ত হিটু শেখকে শনিবার ছুটির দিনে গোপনে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। এ সময় নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পাশবিক নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হিটু।  শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে গোপনে পুলিশের একটি জিপ গাড়িতে তুলে মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে আসামি হিটু শেখকে উপস্থিত করা হয়। এ সময় ১৬৪ ধারায় ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আদালতের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।  মাগুরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি এখনো অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। তবে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর হিটু শেখের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  ধর্ষক ও খুনি হিটু শেখ ও তার পরিবারের প্রকাশ্যে বিচারের দাবিতে সারা দেশসহ মাগুরার ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে তারা মাগুরা সদর থানা, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও মহাসড়ক অবরোধ করে। গত ১০ মার্চ প্রথা ভেঙে রাত ২টায় ধর্ষণে অভিযুক্ত হিটু শেখ ও তার দুই ছেলেকে মাগুরা আদালতে উপস্থিত করে রিমান্ড শুনানি করা হয়।   রিমান্ডে হিটু শেখকে ৭ দিন এবং ছেলে সজিব শেখ, রাতুল শেখ ও স্ত্রী জায়েদা খাতুনকে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।  প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ বোনের বাড়িতে ৮ বছরের আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার পর তাকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে আনা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফদিরপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরে পাঠানো হয় ঢাকায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যায় সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী শিশু আছিয়া। এর আগে ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগে মামলা করেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে কিছু জটিলতার কথা জানায়। কিন্তু বড় বোন মনে করে শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি বোনকে আবার শরীর খারাপের কথা বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তার বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়। শিশু আছিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশের মানুষ এমন নৃশংস পাশবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।  অভিযুক্তদের বাড়িঘর পুড়িয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।  এদিকে মাগুরায় ধর্ষণ ও নির্যাতনে মারা যাওয়া আছিয়ার পরিবারকে আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। শনিবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাগুরায় ধর্ষণ ও নির্যাতনে মারা যাওয়া শিশুটির বিষয়ে সব ধরনের আইনি সহায়তা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। এ ছাড়া তার পরিবার ও বড় বোনের মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য পুনর্বাসনের দায়িত্ব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
Read Entire Article