মাটি লুটের মহোৎসব, কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে পুকুরে

1 day ago 3

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে কয়েকশ একর কৃষি জমি। জমিগুলো পরিণত হচ্ছে পুকুরে।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, জামপুর ইউনিয়নে রাতের অন্ধকারে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেককে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি সরাসরি চলে যাচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায়। ফলে তিন ফসলি জমিকেও পুকুর বানাচ্ছে মাটিখেকোরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামপুর ইউনিয়নের পাকুন্দা ও সিংলাব এলাকার কয়েকশ একর ফসলি জমির মাটি রাতে কেটে নেওয়া হচ্ছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা আবুল বাশার বাবু, জামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হামীম শিকদার শিপলুর বেয়াই কাজী রাসেল ও তার চাচাত ভাই সালাম শিকদারসহ স্থানীয় ১৫-২০ জন।

গত কয়েক দিন সরেজমিনে সিংলাব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কেটে কৃষিজমিকে পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ট্রাক ও নছিমনে করে মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। 

স্থানীয় কৃষক শাহিন মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সময় যারা নির্বিচারে জমির সব মাটি কেটে নিয়েছে তারাই আবার এখন রাতের অন্ধকারে আমাদের চাষের জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।  অনেক জমি থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে কৃষকদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।

পাকুন্দা গ্রামের কৃষক রমজান মিয়া বলেন, কয়েক বছর ধরেই এলাকার প্রভাবশালী নেতারা প্রতিদিন রাতে কোনো না কোনো কৃষিজমির মাটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ধানের মৌসুমে জমির মাটি কেটে নিয়ে গর্ত করে পুকুর বানিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় কৃষিজমির মাটি চুরির বিষয় নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি। তাই বর্তমান সরকারের কাছে কৃষিজমির মাটি লুটের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

অভিযুক্ত আবুল বাশার বাবু বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামীম শিকদার শিপলুর নেতৃত্বে তার বেয়াই কাজী রাসেল ও তার চাচাত ভাই সালাম শিকদার মাটি কাটছে। আমি বিএনপির রাজনীতি করি, আমি এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত না।

অভিযুক্ত কাজী রাসেল বলেন, সালাম শিকদার এমন কাজ করেছে বলে আমরা জানি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
 
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালাম শিকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।  

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এএইচএম রাশেদ বলেন, মাটি কাটার বিষয়টি আমাদের ডিসি স্যার দেখেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হলে আমাদের জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। তবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।

উপজেলা কাঁচপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেগুফতা মেহনাজ বলেন, এখানে নতুন যোগদান করেছি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আমাদের পুলিশ গিয়ে মাটিকাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। সেখান থেকে মাটিকাটায় ব্যবহৃত একটি ভেকু জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। কৃষকরা লিখিতভাবে জানালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা রহমান বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Read Entire Article