মিথ্যা কসম অর্থাৎ অতীতের কোনো ব্যাপারে জেনেবুঝে আল্লাহ তাআলার নামে কসম করে মিথ্যা বলা ইসলামে অত্যন্ত গর্হিত কাজ, বড় কবিরা গুনাহ। ধোঁকা দেওয়ার জন্য, মিথ্যা কথা বিশ্বাস করানোর জন্য, কোনো বিপদ থেকে বাঁচার জন্য বা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য সাধারণত মানুষ মিথ্যা কসম করে থাকে। যে কোনো কারণেই হোক, আল্লাহ তাআলার নামে মিথ্যা কসম ভয়াবহ অপরাধ।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখেরাতের কোনো অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কেয়ামাতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আলে ইমরান: ৭৭)
এ আয়াত নাজিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি তার পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে দাঁড়িয়ে কসম করে বলল, আল্লাহর কসম! ক্রেতারা আমার এই পণ্যের মূল্য আরও বেশি দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তার কথা সত্য ছিল না, তার উদ্দেশ্য ছিল কোনো ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করে তার পণ্য কিনতে উদ্ধৃদ্ধ করা। তখন উপরোক্ত আয়াত নাজিল হয়। (সহিহ বুখারি)
একই বক্তব্য এসেছে হাদিসেও। আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না, এমনকি গুনাহ থেকে তাদের পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। নবী (সা.) কথাটি তিনবার বললেন। আবু জর (রা.) বললেন, তারা সত্যিই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত। তারা কারা, হে আল্লাহর রাসুল! উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, কাউকে কোনো কিছু দিয়ে খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রেতা। (সহিহ মুসলিম)
আরেকটি হাদিসে নবীজি (সা.) মিথ্যা কসমকে শিরক ও হত্যার মত বড় কবিরা গুনাহসমূহের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, কবিরা গুনাহ হলো, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা। (সহিহ বুখারি)
মিথ্যা কসম করে অন্যের অধিকার ছিনিয়ে নিলে বা সম্পদ আত্মসাৎ করলে তার জন্য জাহান্নাম অধারিত হয়ে যায়। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, কেউ মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কোনো মুসলমানের অধিকার হরণ করলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন। এবং তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। (সহিহ মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আরও এসেছে, নবীজির (সা.) এই কথা শুনে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তা যদি খুব সামান্য জিনিস হয়, তবুও? তিনি বললেন, যদি একটা গাছের ডালও হয়, তবুও। (সহিহ মুসলিম)
মিথ্যা কসম অর্থাৎ অতীতের কোনো ব্যাপারে কসম করে মিথ্যা বললে তার কোনো কাফফারার সুযোগ নেই। কাফফারা আছে ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার ব্যাপারে কসম করে তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কেউ যদি মিথ্যা কসম করে ফেলে, তাহলে সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে অন্তরিকভাবে লজ্জিত হতে হবে এবং বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
ওএফএফ

1 hour ago
5









English (US) ·