রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর থানার শিয়ালবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনাকে কাঠামোগত ও গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড বলে বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও আহতদের সুচিকিৎসা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় আইপিডি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুমোদনহীনভাবে যত্রতত্র বিপদজনক শিল্পকারখানা স্থাপন, অগ্নিনিরাপত্তা সনদ না নেওয়া, ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, ভবন ও কারখানার যথাযথ ব্যবহার অনুমোদন না নিয়েই বিপদজনক ব্যবহার এবং নগর পরিকল্পনা যথাযথভাবে অনুসরণ না করার কারণেই দারিদ্র্যপীড়িত শ্রমিকদের আগুনে পুড়ে অসহায়ভাবে মারা যেতে হলো। শিল্প মালিকরা শহরের পরিকল্পনা এবং ইমারত ও শিল্প সংশ্লিষ্ট সব আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। ভবনের যথাযথ কর্মপরিবেশ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে মানুষের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে শিল্প কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বাধ্য করে এই ধরনের কারখানায় কাজ করতে। ফলে মানুষ হত্যার দায় নিয়ে শিল্প মালিকদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করেছে আইপিডি।
বিজ্ঞপ্তিতে আইপিডি আরও জানায়, একইসঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলো জেলা প্রশাসন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এদের প্রত্যেকেই তাদের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এভাবে মানুষ মারা যেত না। ফলে এই ঘটনাকে কাঠামোগত ও গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাসমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা একান্ত জরুরি। ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন নগর এলাকায় যত্রতত্র এসব শিল্পকারখানা অবাধে গড়ে ওঠবার পেছনে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতির একটি চক্র গড়ে উঠেছে, যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি।
নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর দেড় দশক পার হয়ে গেলেও রাসায়নিক গুদামসমূহকে নিরাপদ শিল্প জোনে কেনো স্থানান্তর করা গেলো না—এমন প্রশ্ন রেখে আইপিডি জানায়, সরকারকে অবিলম্বে এই সংক্রান্ত কমিশন গঠন করে করণীয় ঠিক করা প্রয়োজন। আমাদের বিদ্যমান শিল্প আইনে, দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা শ্রমিকদের জীবনের ক্ষতিপূরণের দাম মাত্র দুই লাখ টাকা। এই আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা হলে এবং গাফিলতিজনিত দুর্ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বিবেচনা না করলে শ্রমিকদের মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না বলে মনে করে আইপিডি।
বিল্ডিং কোড এবং নির্মাণসংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান মেনে নিয়ে শিল্প কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার জানিয়ে আইপিডি জানায়, ঢাকা মহানগরীসহ সব জেলা ও উপজেলা শহরে অনুমোদনহীন কেমিক্যাল গোডাউনসমূহকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসমূহকে এক্ষেত্রে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে।
আইপিডির মতে, শহরের মহাপরিকল্পনাকে আমলে না নিয়ে এবং শিল্প জোনে না গিয়ে যত্রতত্র শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে শ্রমিক ও আশপাশের জনবসতির জীবনের নিরাপত্তাকে বিপর্যস্ত করার অধিকার কারও নেই। শ্রমিক ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে রাষ্ট্রের সর্বশক্তি দিয়ে এই প্রবণতা রোধ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এমএমএ/এমএমকে/জেআইএম