মিয়ানমারে ঐতিহাসিক রেলসেতু ভেঙে দিল বিদ্রোহীরা
মিয়ানমারে সামরিক জান্তাবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহীরা বোমা হামলা চালিয়ে দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ‘গোকটেইক’ রেলসেতু ধ্বংস করে দিয়েছে। জান্তা সরকারের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দেশটির অভ্যুত্থানবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে।
গোকটেইক রেলওয়ে সেতু ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৩৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এবং এটি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত। ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত এই সেতুটি চালু হওয়ার সময় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে ট্রেসেল সেতু হিসেবে খ্যাত ছিল। সেতুটি মান্দালয় থেকে উত্তর শান অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত রেলপথে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করত।
জান্তা সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুন এক ভিডিও বার্তায় জানান, তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যরাই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঐতিহাসিক গোকটেইক সেতুটি ধ্বংস করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, সেতুটি আংশিকভাবে ধসে পড়েছে এবং ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিএনএলএর মুখপাত্র লওয়ে ইয়াই উ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায়। তিনি বলেন, “আজ সকালেই মিয়ানমার সেনারা ড্রোন ব্যবহার করে আমাদের ঘাঁটিগুলোতে হামলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের হামলা গোকটেইক সেতুতেও আঘাত হানে।”
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনী দেশটির বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রকামী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি নাওংকিও ও কিয়াউকমি শহরে জান্তা বাহিনী ও টিএনএলযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। যদিও গত জুলাইয়ে নাওংকিও শহর পুনর্দখলের দাবি করেছিল জান্তা।
গোকটেইক সেতুর ধ্বংস দেশের রেল যোগাযোগে বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের গতি আরও প্রকট করেছে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সামরিক দমননীতি সম্পর্কে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।