বাংলাদেশের আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র। তাই একটু নড়াচড়া করলেই অনেকের শরীর ঘামে ভিজে যায়। অফিসে যাওয়ার পথে বা উৎসবে ভিড় ঠেলে দাঁড়ানোর সময় পরিস্থিতি যেন আরও বিব্রতকর হয়ে ওঠে। নতুন পোশাক ভিজে যাওয়া এবং সাজগোজ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আসে দুর্গন্ধ আর ক্লান্তিও।
চিকিৎসকদের মতে, এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেও কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ঘামেন। তাই কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ঘাম স্পষ্টতই চিন্তার বিষয়। এ বিষয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশটির স্কিন ক্রাফট ল্যাবসের প্রধান ডা. কোস্তভ গুহ।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, অতিরিক্ত ঘামের প্রবণতা থাকলে হাইপারহাইড্রোসিসের সমস্যা থাকতে পারে।
এ চিকিৎসক বলেন, মুখ ও মাথা ঘামার অর্থ হচ্ছে ক্রেনিওফেইশল হাইপারহাইড্রোসিস। এ জন্য শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে শীতল হয়, তাপমাত্রা কমে যায় কিন্তু হাইপারহাইড্রোসিস হলে কোনো কারণ ছাড়াই বেশি ঘাম হয়। এমনকি শরীর ঠান্ডা করারও প্রয়োজন হয় না। শতকরা প্রায় দুই-তিনজন এই সমস্যায় ভুগে থাকেন।
অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ
এ ব্যাপারে চিকিৎসক কোস্তভ বলেন, হাইপারহাইড্রোসিস ছাড়াও বংশগত, দীর্ঘ ঘামগ্রন্থি, আবহাওয়ার পরিস্থিতি, অতি আবেগ, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ এবং চিকিৎসাগত কারণেও মুখ ও মাথায় অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে।
ভারতের পুনেতে অবস্থিত কোরেগাঁও পার্কের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. হিতাশা পাতিল একটি তালিকায় হাইপারহাইড্রোসিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে জানিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, সাধারণ লক্ষণগুলো হলো হাতের তালু, পায়ের তলা, বাহুমূল ও মুখ ঘামা।
মুখ অতিরিক্ত ঘামার কারণ হচ্ছে একক্রিন গ্রন্থির অতিরিক্ত উত্তেজনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। যদিও এটি বংশগত হতে পারে। আবার কখনো উদ্বেগ, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, মেনোপেজ, ইনসুলিন, পাইলোকারপাইন ইত্যাদি ওষুধজনিত কারণেও হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম বন্ধের উপায়
অতিরিক্ত ঘাম ক্ষতিকর নয়। তবে এটি ব্যক্তির আত্মসম্মান কমায় এবং কখনো বিব্রতবোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই মুখের অতিরিক্ত ঘাম কামাতে পারে এমন কয়েকটি উপায় জানিয়েছেন ডা. হিতাশা পাতিল ।
তিনি বলেন, মুখের ঘাম দূর করতে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত অ্যান্টিপারস্পাইরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঘামগ্রন্থির স্নায়ুকে নিষ্ক্রিয় করে, যা প্রায় ৮ মাস বা এরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। এ ছাড়া অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ সেবন করতে পারেন, এটি মুখের ঘাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
তিনি আরও জানান, বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো অবস্থা কাটিয়ে তুলতে ব্যবহৃত ওষুধও অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি করে। তাই অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায় হচ্ছে পাউডার ব্যবহার করা। এ ছাড়া সবশেষ উপায় হচ্ছে সার্জারির মাধ্যমে স্নায়ু কেটে ফেলা।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস