মৃতের বাড়িতে কি ৩ দিন আগুন জ্বালানো নিষেধ? যা বলছে ইসলাম
মৃত্যু প্রাণীজীবনের অবিচ্ছেদ্য সত্য। পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলে জন্ম নিলে একদিন না একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। কেউ তা অস্বীকার করতে পারে না, এ সত্য থেকে কেউই পালাতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’(সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন একমুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)
আমাদের আশপাশের কেউ মারা গেলে অনেকের মুখে শোনা যায়, ‘যে বাড়িতে কেউ মারা যায়, সে বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত আগুন জ্বালানো নিষেধ। এটা অশুভ।’ তাই প্রশ্ন জাগে, তাদের এই কথা সত্য কি না। শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি আছে কি না।
এ প্রসঙ্গে দেশের জনপ্রিয় ইসলামী গবেষণা পত্রিকা মাসিক আল কাউসারে বলা হয়েছে, ‘ইসলামে কোনো কিছু থেকে কুলক্ষণ গ্রহণের কোনোই সুযোগ নেই। আর স্বাভাবিক গৃহ-কর্মে আগুন জ্বাললে তাতে কুলক্ষণের তো প্রশ্নই আসে না। এ জন্য এই ধারণা ঠিক নয় যে, যে বাড়িতে কেউ মারা যায় সে বাড়িতে মৃত্যুর দিন এবং পরবর্তী আরও দুদিন আগুন জ্বালানো যাবে না। প্রয়োজনে যে কোনো সময়ই আগুন জ্বালানো যাবে। তাছাড়া মৃতকে গোসল দেওয়ার জন্য সব অঞ্চলেই পানি গরম করার নিয়ম আছে। তখন এই কুলক্ষণের বিষয়টি কোথায় যাবে?’
ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, মৃতের পরিবার স্বজন হারানোর বেদনায় শোকাহত থাকার কারণে রান্না-বান্নার দিকে মনোযোগ দিতে পারে না। এ জন্য পাড়া-পড়শী ও দূর সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনকে পরিবারটির একদিন একরাতের খাবার দাবারের আয়োজন করতে বলা হয়েছে।’ (রাদ্দুল মুহতার : ২/২৪০, ৬৬৬৫)
‘মদীনায় জা’ফর ইবনে আবু তালিব (রা.)- এর শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা জা’ফরের পরিবারের জন্য খাবার রান্না করো। কেননা এ মুহূর্তে তারা এদিকে মনোযোগ দিতে পারবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২/২০৫, ৬/৩৭০, জামে তিরমিযী : ১০০৩)
মোটকথা, মৃতের পরিবারের জন্য খাবার পাঠানো সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়। কিন্তু এখান থেকে এই ধারণা করা যে, মৃতের বাড়িতে আগুন জ্বালানো যাবে না, এটা সম্পূর্ণ ভুল।

6 hours ago
4









English (US) ·