অন্তর্বর্তী সরকার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, সশস্ত্র বাহিনী, রাজনীতি এমনকি দেশের ভবিষ্যতকে অস্থির করার লক্ষ্যে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ।
তিনি বলেন, আগামী যুদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে শুরু নাও হতে পারে, বরং আপনার মোবাইলে আসা কোনো বিকৃত ভিডিও দিয়েই শুরু হতে পারে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুর সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি) ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) যৌথ আয়োজনে ‘তথ্য ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি মোকাবিলার উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল হাফিজ বলেন, সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা দ্রুত ছড়ায় এবং তা আবেগকে উসকে দিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করে। এজন্য সচেতন ও বহুস্তরীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। তিনি তরুণদের ফ্যাক্ট-চেকিং টুল উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা ও মিডিয়া সাক্ষরতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
এমআইএসটির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শেয়ার করার আগে প্রশ্ন করতে হবে, নিজস্ব ফ্যাক্ট-চেকিং টুল তৈরি করতে হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং সামরিক ও বেসামরিক শিক্ষায় মিডিয়া সাক্ষরতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- আরও পড়ুন
আসল ছবিকেই এআই বলে প্রচার করেছে ডিএমপি: রিউমর স্ক্যানার
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অডিও কল রেকর্ড ভুয়া, কৃত্রিমভাবে তৈরি
ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে হামলার ভিডিওটি গুজব
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বলেন, ক্ষতিকর গোষ্ঠীগুলো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বর্ণনা বিকৃত করছে, সামাজিক সংহতি দুর্বল করছে, এমনকি সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল দুর্বল করারও চেষ্টা করছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট শুধু সামাজিক সমস্যাই নয়, এখন তা জনআস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল দুর্বল করতে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী নিজেও সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার কারণে গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়ছে, যা কখনো ব্যক্তি সদস্যকে, আবার কখনো নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করছে। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা ও গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে তথ্যযুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা বলেন, সামাজিক মাধ্যমের প্রোপাগান্ডা সামাজিক আস্থা নষ্ট করছে এবং অস্থিরতা, সংঘাত ও বিভাজন বাড়াচ্ছে, যা গণতন্ত্রকে দুর্বল করার ঝুঁকি তৈরি করছে।
শামীম রেজা প্রস্তাব করেন— মিডিয়া ও ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো, সাংবাদিক, সশস্ত্র বাহিনী ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য ফ্যাক্ট-চেকিং টুল তৈরি করা এবং সরকার, একাডেমিয়া ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জাতীয় কনসোর্টিয়াম গঠন করা।
গাজীপুর ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ মূল প্রবন্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপ লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি শনাক্ত ও প্রতিরোধের সাম্প্রতিক গবেষণার দিক তুলে ধরেন।
সেমিনারে আও বক্তব্য রাখেন— ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুফি মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন, এমআইএসটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ এবং এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান।
বক্তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও অপতথ্যের প্রভাব বিশ্লেষণ করে তা মোকাবিলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তারা উল্লেখ করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপতথ্য ও গুজব মোকাবিলা করতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন এবং সচেতনতামূলক শিক্ষার মিশ্রণ অপরিহার্য। সমাজে অপতথ্য ও গুজবের প্রভাব মোকাবিলায় এর কৌশল, পদ্ধতি ও লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করে সক্রিয় ও বহুমাত্রিক সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হয়। সামরিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে একটি কৌশলগত ঝুঁকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে আলোচনায় তুলে ধরা হয়। যা মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে জানান তারার।
টিটি/ইএ/জেআইএম