আমাদের সমাজে যমজ সন্তানের জন্মকে ঘিরে বরাবরই কৌতূহল, আনন্দ আর বিস্ময়ের মিশেল থাকে। অনেক দম্পতিই মনে মনে চান, একসঙ্গে দুটি সন্তান যেন জন্ম নেয়। তবে যমজ গর্ভধারণ মোটেই কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর পেছনে থাকে পারিবারিক ইতিহাস, জিনগত প্রভাব, হরমোনের পরিবর্তন কিংবা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির ভূমিকা। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যমজ সন্তান হওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত হলেও এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গরিমা চৌহান বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন—কেন, কীভাবে এবং কারা বেশি যমজ সন্তানের সম্ভাবনায় থাকেন।
পারিবারিক ইতিহাসই বড় কারণ
ডা. গরিমা জানান, যমজ সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোনো নারীর মা, দাদি বা বোনের যদি যমজ সন্তান হয়ে থাকে, তাহলে তার ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা থাকে। এটি মূলত জেনেটিক ফ্যাক্টর—অর্থাৎ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য। এটি পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেই। যাদের পরিবারে যমজ সন্তানের ইতিহাস আছে, তাদের তুলনায় অন্য নারীদের ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।
এ ছাড়া ডিম্বস্ফোটন সম্পর্কিত ওষুধও অনেক সময় যমজ সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এসব ওষুধ নারীর শরীরে একাধিক ডিম্বাণু উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। ফলে একাধিক ডিম্বাণু একসঙ্গে নিষিক্ত হলে দুটি ভ্রূণ বিকশিত হয়, যা থেকে জন্ম নিতে পারে যমজ সন্তান।
আইভিএফ চিকিৎসার প্রভাব
বর্তমানে বন্ধ্যত্ব সমস্যায় অনেক দম্পতি আশ্রয় নিচ্ছেন আইভিএফ (In Vitro Fertilization) চিকিৎসায়। এই চিকিৎসায় সফল গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে চিকিৎসকরা প্রায়ই একাধিক ভ্রূণ ইমপ্ল্যান্ট করে থাকেন। ফলে যমজ কিংবা একাধিক সন্তানের জন্মের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
ডা. গরিমা চৌহানের মতে, যমজ সন্তান জন্মের পেছনে জেনেটিক কারণ ছাড়াও চিকিৎসাজনিত কারণ কাজ করে। আবার অনেক সময় ভাগ্যেরও ভূমিকা থাকে—সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
সব নারীর ক্ষেত্রেই সমান নয়
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও একজন নারী যমজ সন্তান ধারণ করেন। আবার কেউ কেউ আইভিএফ চিকিৎসা গ্রহণের পরও যমজ সন্তান ধারণে ব্যর্থ হন। অর্থাৎ, সব নারী সমানভাবে সক্ষম নন, শরীরের ভেতরের জৈবিক প্রতিক্রিয়াই এখানে মূল নিয়ামক।
শেষ পর্যন্ত ডা. গরিমা পরামর্শ দিয়েছেন, যমজ সন্তান হোক বা একক গর্ভধারণ, সব ক্ষেত্রেই নারীদের উচিত নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো এবং নিজের শারীরিক-মানসিক সুস্থতার প্রতি যত্নশীল থাকা।