মানুষের দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মানুষের কাজের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরও দুনিয়ায় থেকে যায় এবং সে কারণে মানুষ সওয়াব লাভ করে, গুনাহেরও ভাগীদার হয়। দুনিয়ায় যে ভালো কাজ রেখে যায়, যার ভালো কাজের কল্যাণকর প্রভাব জারি থাকে, তার আমলনামায় মৃত্যুর পরও সওয়াব যুক্ত হতে থাকে। আর যার পাপের খারাপ প্রভাব দুনিয়াতে থেকে যায়, তার আমলনামায় মৃত্যুর পরও গুনাহ লেখা হতে থাকে।
যেমন কেউ যদি মানুষকে দ্বীনি শিক্ষা দেয় অথবা কোন দ্বীনি বই লেখে যা থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে অথবা ওয়াকফ ইত্যাদি ধরনের কোন জনহিতকর কাজ করে, তার এই সৎকর্মের কল্যাণকর প্রভাব যতদূর পৌছবে এবং যতদিন পর্যন্ত পৌঁছতে থাকবে, ততদিন তার আমলনামায় সওয়াব লিখিত হতে থাকবে।
একইভাবে কেউ যদি নিপীড়নমূলক আইন-কানুন প্রবর্তন করে, এমন কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে যা মানুষের আমল-আখলাক ধ্বংস করে দেয় অথবা মানুষকে কোন মন্দ পথে পরিচালিত করে, তবে তার এসব মন্দ কাজের প্রভাব যে পর্যন্ত থাকবে এবং যতদিন পর্যন্ত থাকবে, ততদিন তার আমলনামায় গুনাহ লিখিত হতে থাকবে।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّا نَحۡنُ نُحۡیِ الۡمَوۡتٰی وَ نَكۡتُبُ مَا قَدَّمُوۡا وَ اٰثَارَهُمۡ وَ كُلَّ شَیۡءٍ اَحۡصَیۡنٰهُ فِیۡۤ اِمَامٍ مُّبِیۡنٍ
আমিই মৃতকে জীবিত করি, আর লিখে রাখি যা তারা আগে পাঠিয়ে দেয় আর যা পেছনে ছেড়ে যায়। সব কিছুই আমি স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সুরা ইয়াসিন: ১২)
অর্থাৎ মানুষ যা আগে পাঠিয়ে দেয় বা তার জীবনকালে যে কাজ করে, তা যেমন লিখিত হয়, তার রেখে যাওয়া কাজের প্রভাবও লিখিত হতে থাকে।
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
لِیَحْمِلُوْۤا اَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً یَّوْمَ الْقِیٰمَةِ وَ مِنْ اَوْزَارِ الَّذِیْنَ یُضِلُّوْنَهُمْ بِغَیْرِ عِلْمٍ اَلَا سَآءَ مَا یَزِرُوْنَ.
কেয়ামতের দিন তারা বহন করবে নিজেদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায়, আর (আংশিক) তাদেরও পাপের বোঝা যাদেরকে তারা গোমরাহ করেছে নিজেদের অজ্ঞতার কারণে। হায়, তারা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট! (সুরা নাহল: ২৫)
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন উত্তম পন্থা প্রবর্তন করে, তার জন্যে রয়েছে এর সওয়াব এবং যত মানুষ এই পন্থার উপর আমল করবে তাদের সওয়াব। পালনকারীদের সওয়াবও কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন কু-প্ৰথা প্রবর্তন করে, সে তার গোনাহ ভোগ করবে এবং যত মানুষ এই কুপ্ৰথা পালন করতে থাকবে, তাদের গোনাহও তার আমলনামায় লিখিত হবে। আমলকারীর গোনাহও কমানো হবে না। (সহিহ মুসলিম: ১০১৭)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে নবিজি (সা.) বলেন, যে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে এর গোনাহের একটা অংশ প্রথম আদম সন্তানের উপর বর্তায়। কারণ সেই প্রথম হত্যার প্রবর্তন করেছে। (সহিহ বোখারি: ৩৩৩৫, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৭)
মৃত্যুর পর সওয়াব জারি থাকা প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; ১. সদকায়ে জারিয়া (ফায়েদা অব্যাহত থাকে এ রকম সদকা যেমন মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) ২. ইলম বা জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে ৩. সুসন্তান যে তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। (সহিহ মুসলিম: ৪৩১০)
তাই আমাদের সবার কর্তব্য দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার আগে কিছু কল্যাণকর প্রভাব রেখে যাওয়ার চেষ্টা করা যেন মৃত্যুর পরও আমাদের সওয়াব জারি থাকে। কোনোভাবেই যেন এর বিপরীতটা না হয়। দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পরও আমাদের আমলনামায় যেন গুনাহ যুক্ত না হতে থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন!
ওএফএফ/জিকেএস