অনেকেই বিশ্বাস করেন, ‘রমজান মাসে কবরের আজাব মাফ থাকে। অনেকে তো আবার এটিও বিশ্বাস করেন যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমজান এলে কেয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়!’ তবে এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
চলুন জেনে নেওয়া যাক-
না, মানুষের এমন ধারণা সঠিক নয়। এটি একটি ভিত্তিহীন ধারণা। কোরআন-হাদিসে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। মূলত কবরের আজাব হওয়া না হওয়ার সঙ্গে রমজানের কোনো সম্পর্ক নেই, ব্যক্তির নিজস্ব ইমান এবং নেক আমলের সঙ্গে এর সম্পর্ক।
রমজান মাসে কবর আজাব বন্ধ থাকবে, এ মর্মে রাসুল (সা.)-এর কোনো সহিহ হাদিসে পাওয়া যায় না। আমাদের সবার উচিত ওই সব কাজ থেকে বিরত থাকা, যার কারণে কবরে আজাব হয়। আর ওইসব কাজের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার ফলে কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তবে হ্যাঁ, রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
হুযায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন রোজা রাখে এবং এ রোজা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোজাদার অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২৩৩২৪; আল আসমা ওয়াস সিফাত, বায়হাকী, হাদিস ৬৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস ১১৯৩৫)
অর্থাৎ রোজা রাখা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু রমজান মাসে কবরের আজাব মাফ- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।
একটি হাদিস থেকে সম্ভবত মানুষের মাঝে এ ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে-
যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন এবং শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না।
একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরও অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। -(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৬৪২; সহিহ ইবনে খুযায়মা, হাদিস ১৮৮৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস ১৫৩২)
‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- হাদিসের এ বর্ণনা থেকে হয়তো অনেক মানুষের মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে রমজানে কবরের আজাবও বন্ধ থাকে।
অনেক আলেমের মতে, রমজানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, প্রতি রাতে আল্লাহ অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং রোজাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- এগুলো সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। কিন্তু রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।