রাকসু ঘিরে সরগরম ক্যাম্পাস, জয়-পরাজয়ের ৪ ফ্যাক্টর

4 days ago 11

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন রাকসু (কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন ঘিরে সরগরম ক্যাম্পাস। চায়ের কাপে বন্ধুদের আড্ডায়, হল কিংবা ক্যান্টিন অথবা টিএসসির সবখানেই একই আলোচনা। ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য প্যানেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কে কোন পদে দাঁড়াচ্ছেন তা জানতে শিক্ষার্থীর মুখিয়ে আছে।

নেতৃত্বের দক্ষতা কতটুকু আছে, সংগঠক হিসেবে কেমন, গণঅভ্যুত্থানে বা অতীতে কী ধরনের ভূমিকা ছিল অথবা পাস করলে শিক্ষার্থীদের পাশে কতটুকু থাকবেন এ নিয়েই চলছে আলোচনা। তবে আসন্ন নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে অন্তত ৪টি বড় ফ্যাক্টর রয়েছে বলে মনে করছেন রাবির সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত প্রার্থীরা। বিভিন্ন আলোচনায় প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রম নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

এদিকে প্রার্থীরাও বসে নেই। রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা। নিজেদের ব্যক্তিগত আইডি, পেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত বিভিন্ন গ্রুপে নিজের পরিচয় ও ভোট চাইছেন। দিচ্ছেন নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি।

আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু না হলেও নিজেদের মতো করে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। প্রার্থীরা আড্ডা-গল্প ও কুশলবিনিময়ের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এরইমাঝে রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি সম্ভাব্য ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ছেলেদের হলগুলোর কক্ষে আতর দিয়ে করছেন শুভেচ্ছা বিনিময়। হলের প্রতিটি ব্লকে হচ্ছে মুড়ি পার্টি।

তবে এবারের নির্বাচনে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিমত, অতীতে রাকসু নির্বাচনে ছাত্রসংগঠনগুলোর একক প্রভাব থাকলেও এবার পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। কারণ একেতো নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ছাত্রলীগ নেই, আবার ছাত্রদল-শিবির-বামসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের অনেকেরই ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে ছাত্রসংগঠনগুলোর জন্য সমীকরণ মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে এবার রাকসু নির্বাচনে ৪টি ‘ফ্যাক্টর’ (নির্ধারক বিষয়) উঠে এসেছে। প্রথম ফ্যাক্টর ভোটারদের ৩৯ শতাংশই ছাত্রী। দ্বিতীয় ফ্যাক্টর—শহীদ হবিবুর রহমান হলে ২ হাজার ৩৯৮ ও মেয়েদের মুন্নুজান হলে ভোটার হলে ২ হাজার ৭টি ভোট। তৃতীয় ফ্যাক্টর—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কার কী ভূমিকা ছিল। চতুর্থ ফ্যাক্টর—প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি।

এসব ফ্যাক্টরের পেছনে যুক্তি তুলে ধরে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, নির্বাচনে একাধিক ছাত্রসংগঠন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে একক প্যানেলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে শিক্ষার্থীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে।

তবে জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া রাবি ক্যাম্পাস রাজনীতির নতুন সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। রাজশাহীতে একটা প্রভাব থাকলেও ইতিহাসে এতটা প্রকাশ্যে, অবাধে নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ আর কখনো পায়নি। তাদেরও নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। বামপন্থি জোট, অন্যান্য ইসলামীপন্থি সংগঠনগুলোর নিজস্ব ভোট যেমন রয়েছে তেমনি স্বতন্ত্র প্যানেলের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, সালাউদ্দীন আম্মারন, তাসিন খানের মতো অনেক পরিচিত মুখ রয়েছেন।

রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় কালবেলাকে বলেন, নারীদের অধিকাংশই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু তারা সচেতন। অথচ নারীদের বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনে নারীদের ভোট অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। 

তিনি বলেন, অনেকেই লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি পছন্দ করে না। পুরুষ শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে এবং বেশি সমর্থন পায়, অথচ নারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরেও নিরাপদ মনে করে না। বাইরের হলগুলোতে গিয়ে প্রচার চালানো আমাদের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এবার নির্বাচনে যাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে এবং ক্যাম্পাসে নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে যারা অগ্রাধিকার দেবে মনে হয় নারীদের ভোট তারাই পাবেন।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু ছালেহ বলেন, আমাদের হলে ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৩৯৮ জন। ফলে এবারের রাকসু নির্বাচনে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর বড়সংখ্যক ভোটার এক হলে থাকায় প্রার্থীরাও এখানে প্রচারে যারা বেশি গুরুত্ব দিবে তাদের এই ভোটগুলোর পাওয়ার সম্ভবনা বেশি। আমরা চাই এমন নেতৃত্ব আসুক যারা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, হলে সিট বরাদ্দের স্বচ্ছতা, আর রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি বন্ধ করার বিষয়ে যে প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দেবেন এবং তা বাস্তবায়ন করবেন—আমরা তাকেই ভোট দেব।

রাবির সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী নাজমুল আলম বলেন, অতীতের চেয়ে এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে আমরা এমন নেতৃত্বে চাই-যারা অতীতের মতো গণরুম-গেস্টরুম কালচার চিরতরে করবে, ক্যান্টিনে বা হলে ফাও খাওয়া থেকে রাজনৈতিক যেসব অপসংস্কৃতি ছিল, সেগুলোর থেকে বেরিয়ে আসবে। যিনি শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিরসনে কাজ করবেন এবং পাশে থাকবেন, অবশ্যই এমন প্রার্থীদের পছন্দের তালিকায় রাখব।

উল্লেখ্য, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্যানেল থেকে মনেনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ছাত্রদল ২৬ জন, ছাত্রশিবির ২১ জন, গণ ছাত্রজোট ২৩ জন, আফরিন জাহান ২৩ জন, সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ ১৫ জন, আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য ২১ জন, অপরাজেয় ৭১ জাগ্রত ১৩ জন, তৌহিদুল ইসলাম ৭ জন, নাজমুস সাকিব ৬ জন, পদ উল্লেখ ব্যতীত ৯ জন জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

Read Entire Article