গভীর রাতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানা থেকে মূল্যবান যন্ত্রাংশ সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারখানাগুলো ইসলামী ব্যাংকের জুবলি রোড ব্রাঞ্চে বন্ধক রয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাত এ যন্ত্রাংশ সরিয়ে নেওয়া শুরু হয় বলে ইসলামী ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা এস এ এম জুবায়ের চান্দগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
জিডিতে এস এ এম জুবায়ের উল্লেখ করেছেন, আরামিট গ্রুপের আরামিট সিমেন্ট, আরামিট স্টিল পাইপ, আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম আমাদের নিকট বন্ধক আছে। আমরা জানতে পারি যে, ফ্যাক্টরির মেশিনারিজ ও অন্যান্য মালামাল তারা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের শাখার গোডাউন গার্ড মো. ইলিয়াস ঘটনাস্থলে গেলে বিবাদী সাজ্জাদ হোসেন আরামিটের কর্মকর্তাসহ কতিপয় লোকজন তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র কালবেলাকে জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি অনিয়ম তদন্ত ও অনুসন্ধান সংক্রান্ত দলের দলনেতা ও দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বেশ কয়েকদিন ধরে চট্রগ্রামে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত দল সাইফুজ্জামানের বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে আটকের পরে তার অর্থ পাচারের নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় ভয় ও আতঙ্কে সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার কর্মচারীদের মাধ্যমে মূল্যবান যন্ত্রাংশ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন।
জানা গেছে, গভীর রাতে প্রায় ৭ কোটি টাকা দামের একটি মূল্যবান মেশিন আরামিট সিমেন্ট কারখানা থেকে মাত্র ৭০ লাখ টাকা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের জুবলি রোড শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আব্দুল আজিম কালবেলাকে বলেন, যন্ত্রাংশ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবে আদালতের আদেশ ছাড়া এখানে আমাদের কিছু করার নাই। পুরোটাই আদালতের এখতিয়ার।
কিন্তু এ ফ্যাক্টরিগুলোতো আপনাদের শাখায় বন্ধক রেখে শত শত কোটি টাকা ঋণ নেওয়া– সেক্ষেত্রে এসব যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিলে রাষ্ট্রের বা আপনাদের ক্ষতি হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে কি না সেটা আমি কীভাবে বলব? তাছাড়া আমাদের ক্ষতি বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। অন্য সম্পত্তি বিক্রি করেও তো ঋণ পুনরুদ্ধার হতে পারে।
এরপর বেশ কয়েকবার মালামাল এভাবে হরিলুট হলে ব্যাংকের ক্ষতি হবে কি না– প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। আদালতের আদেশ আসতে আসতে তো সব মালামাল লুট হয়ে যাবে এমন প্রশ্নে আব্দুল আজিম বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নাই। আদালতের আদেশ ছাড়া আমাদের কিছু করার নাই।
জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, এখানে প্রথম দায়িত্ব ব্যাংকের৷ কারণ ব্যাংকে ওই সম্পত্তি মর্টগেজ রেখে তারা ৬০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে। ব্যাংকের উচিত ওইসব সম্পত্তি রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে তারা তো ঋণের টাকা উদ্ধার করতে পারবেন না। এটা অবশ্যই ব্যাংক এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি।
তিনি আরও বলেন, আমি ইতোমধ্যেই স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করছি।