রাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, বিচারসহ চার দাবিতে বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সায়মা হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এদিকে সায়মার মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষদিন আজ।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে, সায়মা, সায়মা’, ‘আমার বোন মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘কে মেরেছে, কে মেরেছে, প্রশাসন প্রশাসন’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, রাবি মেডিকেল সংস্কার’, নাপা সেন্টার সিন্ডিকেট, ‘ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘বিচার চাই, সায়েমার বিচার চাই’, ‘চিকিৎসা নামের প্রহসন চলবে না’, ‘তুমি কে আমি কে, সায়েমা সায়েমা’, ‘অবহেলায় শিক্ষার্থী মরে, প্রশাসন কী করে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের অন্য তিনটি দাবি হলো প্রশাসনের মাধ্যমে সায়মার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের সংস্কার ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে রোডম্যাপ ঘোষণা এবং সুইমিংপুলের একটি অংশের গ্যালারি সায়মার নামে নামকরণ।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল আজিজ বলেন, আমি মনে করি এটি অবহেলাজনিত একটা হত্যাকাণ্ড। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেমের কারণে এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবেই সায়মার মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের সঠিক ট্রিটমেন্ট পেলে কোনো শিক্ষার্থী মারা যেত না। আমাদের দাবি, এই হত্যার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং যারা এ অবহেলা করেছে তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। সায়মার পরিবারকে এমনভাবে আর্থিক সমর্থন জোগাতে হবে যেন তাদের অভাব না হয়।’
তিনি বলেন, প্রশাসনকে তিন দিনের সময় দিয়েছি। এর মধ্যে তারা যদি কোনো সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারে, তাহলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রাকসুর সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, আমরা চাই শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা শিগগিরই মেনে নিয়ে তা কার্যকর করা হোক। ইতোমধ্যে আমরা জানিয়েছি রাবি মেডিকেলসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক আকারে সংস্কার প্রয়োজন। তবে সেখানে যেই জিনিসগুলো বাতিল বা পরিবর্তন প্রয়োজন তার মধ্যে অগ্রগণ্য হচ্ছে অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে যদি ট্রেনারের সামনে ট্রেইনি ডুবে যায় আর মেডিকেল সেন্টারে যদি অক্সিজেনের অভাবে কোনো রোগী মারা যান তাহলে কিছু গাধা আর গাধার আস্তাবল রেখে লাভ কী? সাইমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দুর্ঘটনা বলা ঠিক হবে না। এটা স্পষ্ট অবহেলাজনিত হত্যা। এটা সুষ্ঠু তদন্ত করে যাদের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইন রাবির সুইমিংপুলে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে— এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও অস্বাভাবিক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠদানের স্থান নয়, এটি প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রও। সায়মা সাঁতারে পারদর্শী ছিল, নিজের প্রতিভাকে আরও বিকশিত করতে সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, সুইমিংপুলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী, প্রশিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও একজন সাঁতার জানা শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যু অস্বাভাবিক। এর পেছনে কোনো গাফিলতি বা অবহেলা থাকলে তা চিহ্নিত করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের উচিত এ ঘটনায় নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা। না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামাত্রিক শিক্ষামূলক ও সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে নেমে পানিতে ডুবে যান সায়মা হোসাইন। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
সায়মা হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষবর্ষের শিক্ষার্থী ও মন্নুজান হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

2 hours ago
4









English (US) ·