রাশিয়া ও ইউক্রেনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান নিয়ে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ কিভাবে থামতে পারে, পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে তা নিয়েও চলছে আলোচনা। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি হলে দুই দেশের মাঝখানে গড়ে উঠতে পারে একটি বাফার জোন, আর সেটির নিরাপত্তা তত্ত্বাবধানে নেতৃত্ব দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বাফার জোনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সেখানে মোতায়েন করা হতে পারে ন্যাটো বহির্ভূত দেশগুলোর সেনা। আলোচনায় আছে সৌদি আরব ও বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের নাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিকল্পিত বাফার জোন হবে একটি বৃহৎ নিরস্ত্রীকরণ এলাকা, যাতে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসন ঠেকানো যায়। সৌদি কিংবা বাংলাদেশের সেনাদের অংশগ্রহণ সেই নিরাপত্তা জোরদার করবে বলেই মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা।
তবে জটিল বাস্তবতায় যুদ্ধ থামার কোনো দ্রুত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আলাস্কায় গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি বৈঠক করলেও মস্কো এখনো শান্তিচুক্তির কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়নি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক নিয়েও অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন পুতিন। এতে হতাশা বাড়ছে ট্রাম্পের ভেতরে।
বাফার জোন আসলে কী? এটি হলো সংঘাতপূর্ণ দুই অঞ্চলের মাঝখানে গড়ে ওঠা একধরনের নিরপেক্ষ বা নিয়ন্ত্রিত এলাকা। উদ্দেশ্য একটাই—উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ প্রতিরোধ করা।
এর আগে আগস্টে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন, যে কোনো শান্তিচুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। বৈঠকের পর জেলেনস্কি একে তার মতে “সেরা বৈঠক” আখ্যা দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমন্বয় করবে না, বরং নিরাপত্তা নিশ্চয়তারও অংশীদার হবে— এটি ইউক্রেনের জন্য বড় অগ্রগতি।
যদিও সহায়তার ধরন তখন খোলাসা হয়নি। পরে জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের একটি সামরিক সহায়তা প্যাকেজ দেবে। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় ড্রোনও কিনবে।
চলতি সপ্তাহে আবারও আলাস্কায় ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষার প্রথম সারিতে থাকবে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনকে যথেষ্ট সহায়তা করবে।
জেলেনস্কি এ সময় আবারও জানান, ইউক্রেন আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ভূখণ্ড বিনিময়ের মতো সংবেদনশীল ইস্যু সরাসরি তার ও পুতিনের আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।