লন্ডনে আন্ডারগ্রাউন্ড ধর্মঘট, ভোগান্তিতে লাখো যাত্রী

13 hours ago 3

এস ইসলাম, লন্ডন

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে সোমবার সকালে শুরু হওয়া আন্ডারগ্রাউন্ড টিউব ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। দিনের শুরুতেই সবগুলো প্রধান পাতাল রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখো মানুষ বাধ্য হয়েছেন বিকল্প পরিবহনের ওপর নির্ভর করতে।

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৬টা থেকে ট্রেনচালক ও কর্মীদের ডাকা এ ধর্মঘট শুরু হয়। বেতন কাঠামো, কর্মঘণ্টা এবং চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিনের আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় শ্রমিক সংগঠন এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

ধর্মঘটের কারণে সকালে অফিসগামী যাত্রীদের ভিড়ে শহরের সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বাস ও ট্যাক্সিতে গাদাগাদি করে যাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা যায়। অনেকেই সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি।

যাত্রীদের একজন বাংলাদেশি প্রবাসী আরিফ হোসেন বলেন, আজ অফিসে পৌঁছাতে স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণ সময় লেগেছে। এমন পরিস্থিতিতে কাজকর্ম পরিচালনা করা ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের ভোগান্তি তারা বুঝতে পারছেন, তবে শ্রমিকদের দাবিগুলো সমাধানে এখনো সমঝোতার চেষ্টা চলছে। সমঝোতা না হলে ধর্মঘট আরও কয়েক দিন চলতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে শ্রমিক সংগঠন।

লন্ডনে আন্ডারগ্রাউন্ড ধর্মঘট, ভোগান্তিতে লাখো যাত্রী

লন্ডনের টিউব বা আন্ডারগ্রাউন্ড প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ যাত্রী পরিবহন করে। এতে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটলে গোটা নগরীর অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ধর্মঘট আহ্বানকারী শ্রমিক সংগঠন আরএমটি তাদের ১০ হাজার ৪০০ টিউব সদস্যকে রোববার থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক ধর্মঘটে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে, যা শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেবায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংগঠনটির দাবি—লন্ডনের মেয়রকে অবশ্যই চার দিনের কর্ম সপ্তাহ ও সপ্তাহে ৩২-ঘণ্টাকে কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে।

লন্ডন মেয়র সাদেক খান ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে ডাকা ধর্মঘট ঠেকাতে সিটি হলের তহবিল থেকে ৩ কোটি পাউন্ড দিয়েছিলেন টিউব কর্মীদের অতিরিক্ত বেতন ভাতা বাড়াতে।

তবে সোমবার বিকেলে লন্ডনের স্থানীয় গণমাধ্যমকে তিনি জানান, গত বছরের সেই উদ্যোগ ছিল ‌‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির’ কারণে—এবার তিনি আর তা করতে ‘অক্ষম’।

তিনি দ্য ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আরএমটি ও টিএফএল একসাথে বসে নিজেদের ভিন্নমতগুলো নিয়ে আলোচনা করা এবং যতটুকু সম্ভব সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। আমি ঢাকঢোল পিটিয়ে বলতে চাই না—এই ধর্মঘটগুলো আমাদের শহরের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর খবর।

তিনি আরও বলেন, এগুলো হাসপাতালে রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্টে যেতে সমস্যা তৈরি করছে, অভিভাবকদের জন্য সন্তানদের স্কুলে পৌঁছানো কঠিন করে তুলছে, আর যারা বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ পান না তাদের জন্য তো আরও কষ্টদায়ক।

মেয়র উল্লেখ করেন, অতীতে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে—যেমন রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি বা লিজ ট্রাসের ‘মিনি বাজেট’—তিনি মেট পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড এবং টিএফএলকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। তবে এখন সেটি আর সম্ভব নয়।

ধর্মঘটের মধ্যেও শত শত লন্ডনবাসী শুধু এলিজাবেথ লাইন, বাস ও সাইকেল ব্যবহার করে সেন্ট্রাল লন্ডনের কর্মস্থলে পৌঁছান। তবে কিছু ছোট ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যে ইউনিয়ন লন্ডনকে ‘জিম্মি’ করে রেখেছে।

ভাড়া ভিত্তিক বাইক কোম্পানি লাইম জানিয়েছে, তাদের ই-বাইকের চাহিদা ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। মেয়র সাদিক খান টিএফএল বোর্ডের চেয়ারম্যানও। গত বছরের তার হস্তক্ষেপের কারণে এবার টিএফএলের পক্ষে আলোচনায় কঠোর অবস্থান নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

কারণ, আরএমটি আলোচকরা মনে করেন টিএফএলের ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’-এ ৩.৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে কিন্তু সাপ্তাহিক ৩৫ ঘণ্টার কর্মঘণ্টা কমানো হয়নি।

তাদের বিশ্বাস, টিএফএলের ওপর চাপ বাড়িয়ে—আরও ধর্মঘটের হুমকিসহ—কমপক্ষে সপ্তাহে আধা ঘণ্টা হলেও কর্মঘণ্টা কমানোর সুযোগ তৈরি করা যাবে।

আরএমটি মূলত এ ধর্মঘট করছে টিএফএলের কাছ থেকে দাবি করতে, যা দীর্ঘদিন ধরে টিউব স্টেশন কর্মীদের শিফট প্যাটার্ন ও কর্ম-ক্লান্তি সংক্রান্ত উদ্বেগের সঙ্গে জড়িত।

বাস্তবতা হল, একদিকে কাঙ্ক্ষিত দাবি-দাওয়া পূরণে লন্ডন মেয়র অপারগতা প্রকাশ করেছেন এবং অপর দিকে অপর দিকে টিএফএল কর্তৃপক্ষকে তা মানতে বাধ্য করার বিষয়ে আন্দোলনকারীরাও রয়েছেন কঠোর অবস্থানে। এ দুয়ের মাঝখানে পড়ে লন্ডনবাসীর অবস্থা নাকাল।

এমআরএম/জেআইএম

Read Entire Article