লন্ডনের রাস্তাজুড়ে ক্যারিবীয় সংস্কৃতির মহোৎসব

5 hours ago 6

এস ইসলাম, লন্ডন থেকে

ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও প্রাণময় স্ট্রিট ফেস্টিভ্যাল লন্ডনের নটিং হিল কার্নিভ্যাল। ব্রিটিশ-ক্যারিবীয়ান কমিউনিটির উদ্যোগে ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করা এ উৎসব ধীরে ধীরে কেবল ক্যারিবীয় সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আজ সর্বজনীন ও বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে।

লন্ডনের রাস্তাজুড়ে ক্যারিবীয় সংস্কৃতির মহোৎসব

প্রতি বছর যুক্তরাজ্য ছাড়াও ইউরোপ ও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নানা ধর্ম, বর্ণ ও বয়সের শতসহস্র মানুষের ঢল নামে এই বর্ণিল আয়োজনে। প্রথা অনুযায়ী, আগস্টের শেষ সপ্তাহান্তে শুরু হয়ে কার্নিভ্যাল শেষ হয় সোমবারে—যেদিন যুক্তরাজ্যে গ্রীষ্মকালীন শেষ ব্যাংক হলিডে পালিত হয়।

লন্ডনের রাস্তাজুড়ে ক্যারিবীয় সংস্কৃতির মহোৎসব

শনিবার (২৩ আগস্ট) উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় হর্নিমেন’স প্লেজার পার্কে। প্রথমেই অনুষ্ঠিত হয় স্টিল ব্যান্ড প্রতিযোগিতা। বিশাল ড্রাম, রঙিন পোশাক আর স্টিলপ্যানের ঝংকারে যেন গোটা লন্ডন কেঁপে ওঠে। সেই সুরে নৃত্য মগ্ন নারী-পুরুষ মেতে ওঠেন আনন্দে। সূর্য অস্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ যেন রূপ নেয় দূর কোনো ক্যারিবীয় দ্বীপে।

লন্ডনের রাস্তাজুড়ে ক্যারিবীয় সংস্কৃতির মহোৎসব

রোববার (২৪ আগস্ট) পালিত হয় ‘শিশু দিবস’। রঙিন পালক, ঝলমলে পোশাক আর মুখে আঁকা নকশায় সজ্জিত শিশুরা নাচে-গানে ভরিয়ে তোলে পুরো এলাকা। বিভিন্ন সাউন্ড সিস্টেম থেকে ভেসে আসে রেগে, সোকা ও হাউস মিউজিকের সুর। নাম ‘শিশু দিবস’ হলেও উৎসবে আবাল বৃদ্ধ বনিতার সক্রিয় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

লন্ডনের রাস্তাজুড়ে ক্যারিবীয় সংস্কৃতির মহোৎসব

সোমবার (২৫ আগস্ট) ছিল ‘প্রাপ্তবয়স্কদের দিন’। সকাল থেকেই হাজারো মানুষের সমাগমে চারদিক রঙের বন্যায় ভরে ওঠে। পালকের পোশাক, গ্লিটার আর উজ্জ্বল মেকআপে সজ্জিত নৃত্যশিল্পীরা সঙ্গীতের তালে তালে এগিয়ে চলে—মনে হচ্ছিল যেন জীবন্ত রংধনু নেমে এসেছে লন্ডনের রাস্তায়।

তবে দুপুর ৩টার দিকে আনন্দমুখর পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে নীরবতা। ৭২ সেকেন্ড নীরবতা পালন করা হয় গ্রেনফেল টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে। প্রমাণিত হলো, কার্নিভ্যাল কেবল আনন্দের উৎস নয়—এটি হতে পারে দুঃখময় স্মৃতিচারণেরও মঞ্চ।

তিন দিনের উৎসব শেষে রঙ, সুর ও ঐক্যের এই মহামিলনমেলা স্তিমিত হয়। লন্ডন আবারও ফিরে যায় যান্ত্রিক জীবনের চক্রে। কিন্তু আনন্দ-উচ্ছ্বাসের আবহের মাঝেই থেকে যায় এক বিষাদের ছাপ—ফেস ডিটেকশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ হোম অফিস প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ অভিবাসীকে শনাক্ত করে আটক করেছে।

এমআরএম/জেআইএম

Read Entire Article