লাভের বন্দরে বর্ধিত মাশুল নিয়ে প্রশ্ন, বোঝা ভোক্তার কাঁধে

3 hours ago 5

আমদানি-রপ্তানি মিলে ৫৬ সেবায় মাশুল বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। সরকারি গেজেট প্রকাশের এক মাস পরে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে এ মাশুল কার্যকর হয়েছে। ঘোষণার পর থেকে বন্দর সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টরাও মাশুল বাড়িয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের বর্ধিত এ মাশুলের প্রভাব পড়বে পণ্যের দামে। এতে বর্ধিত মাশুলের চাপে ভোক্তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, লাভের চট্টগ্রাম বন্দর কেন মাশুল বাড়িয়েছে। বিদেশি অপারেটরদের লাভের জন্য মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে বন্দরের দুটি টার্মিনাল অপারেশনের দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বর্ধিত ট্যারিফ প্ল্যান অনুযায়ী, ৫৬টি সেবার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ছে। টাগ বোট সার্ভিস, পাইলট চার্জসহ কিছু কিছু সেবায় মাশুল বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ থেকে চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। পণ্যভর্তি প্রতি টিইইউস (২০ ফুট একক) কনটেইনারে বর্তমানে গড়ে মাশুল নির্ধারিত হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগে গড়ে কনটেইনারপ্রতি ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। নতুন ট্যারিফ রেট অনুযায়ী, কনটেইনার ওঠানো-নামানোতে আগের ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার চার্জ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৮ ডলার।

খরচ কমানোর জন্য বায়াররা প্রতিযোগী অন্য দেশে চলে যেতে পারেন। আবার আমাদের দেশের ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ও বেড়ে যাবে, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোক্তাদের কাঁধে গিয়ে পড়বে।- বাপা সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তারপরেও বিগত বছরগুলোতে বন্দর ধারাবাহিক লাভে ছিল। লাভের টাকায় বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বিভিন্ন ইনসেনটিভ ভোগ করেছে। কিন্তু এ মুহূর্তে গড়ে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে মাশুল বাড়ানো যেতে পারে।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া গেলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কৃষিকে আরও লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রক্রিয়াজাত খাবার রপ্তানি হচ্ছে। কাঁচামাল আমদানিও হচ্ছে। বর্তমানে বন্দর যে ট্যারিফ বাড়িয়েছে, সে হিসেবে রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

তিনি বলেন, ‘খরচ কমানোর জন্য বায়াররা প্রতিযোগী অন্য দেশে চলে যেতে পারেন। আবার আমাদের দেশের ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ও বেড়ে যাবে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোক্তাদের কাঁধে গিয়ে পড়বে।’

বর্ধিত ট্যারিফে রপ্তানিমুখী পোশাকখাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ চট্টগ্রামের পরিচালক এবং এইচকেসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা চলছে। আরএমজি সেক্টরে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগী বাড়ছে। এখন বন্দরের মাশুল বাড়ার কারণে বিদেশি বায়ারদের পোশাক আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে।’

ট্যারিফ বেশি হওয়ায় কনটেইনার ও জাহাজ ভাড়া বাড়ছে। এতে আমদানি খরচ বাড়বে। ফলে পরিবাহিত পণ্যের দামও বাড়বে।- বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল কবীর সুজন

ট্যারিফ বাড়ানোতে আগামী জানুয়ারি থেকে আরএমজি সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন বছরের শুরু থেকে আমাদের পোশাকখাত নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কারণ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় অংশ যায় ইউরোপে। আন্তর্জাতিক জটিল সমীকরণে ইউরোপের বায়াররা ভারতমুখী হলে আমাদের গার্মেন্টসগুলো ক্ষতির শিকার হবে। এতে কর্মসংস্থান কমার আশঙ্কা রয়েছে।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল কবীর সুজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ট্যারিফ বেশি হওয়ায় কনটেইনার ও জাহাজ ভাড়া বাড়ছে। এতে আমদানি খরচ বাড়বে। ফলে পরিবাহিত পণ্যের দামও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম মাশুল যদি নিতান্ত বাড়াতেই হয় তাহলে ১০-১৫ শতাংশের বেশি যাতে বাড়ানো না হয়। এখন পণ্য আমদানির বর্ধিত ব্যয় ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছ থেকেই আদায় করবেন। এতে ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/এমকেআর

Read Entire Article