ল্যাম্বরগিনির আদলে স্পিডবোট তৈরি করলেন দশম শ্রেণীর রাহাদ

1 hour ago 4

ইতালীয় বিলাসবহুল স্পোর্টসকার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বরগিনি। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ও জনপ্রিয় স্পোর্টকার এটি। সেই ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর আদলে স্পিডবোট বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রাহাদ নামের এক স্কুল ছাত্র। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এক স্কুল ছাত্র তৈরি করলেন ল্যাম্বরগিনির আদলে স্পিডবোট। যা এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। কোটি টাকার ল্যাম্বরগিনি কার এখন চলছে ব্রাহ্মপুত্র নদে।

১৭ বছর বয়সী রাহাদ খন্দকার গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের রুপালী বেগম ও শফিকুল ইসলাম দম্পতির সন্তান। তিনি স্থানীয় গুনভরী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। দুই ভাইবোনের মধ্যে রাহাদ বড়। ছোট বোন শাফিয়া আকতার সিফা স্থানীয় স্কুল মধ্য উড়িয়া চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা শফিকুল ইসলাম পেশায় কৃষক। মা রুপালী বেগম একজন গৃহিণী। অভাবের সংসারে জন্ম হলেও স্বপ্ন জয় করার বুক ভরা আশা রাহাদের।

ল্যাম্বরগিনি গাড়িতে চারটি চাকা থাকার কথা থাকলেও এখন গাড়িটি শুধু পানিতে চলে বলে চাকাগুলো সংযোগ করা হয়নি। বর্তমানে চাকার জায়গায় শুধু চাকার ছবি আঁকা রয়েছে। গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে সামনে একটি স্টিয়ারিং, যা কাঠ দিয়ে রাহাত নিজেই তৈরি করেছেন। ইঞ্জিন এবং তেলের অবস্থা জানার জন্য স্টিয়ারিংয়ের সামনেই রয়েছে মিটার। তার পাশেই রয়েছে লাইটিং, হর্ন প্রভৃতির জন্য কিছু সুইচ এবং সেলফ স্টার্টার। এই স্পিডবোটে রয়েছে সামনে ২ জন ও পেছনে ৩ জনসহ মোট ৫ জন বসার ব্যবস্থা। পানিতে চলালে ঘণ্টায় দুই লিটার তেল খরচ হয়। রাহাদের তৈরি এ স্পিডবোট দেখতে প্রতিদিনই দূর-দুরান্ত থেকে দলে দলে আসছে মানুষ।

রাহাদের ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরির দিকে ঝোঁক ছিল। এর আগে ধান কাটার মেশিন, রোবটসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন। এসব জিনিস তৈরি করতে করতেই তিনি স্বপ্ন দেখেন বড় কিছু তৈরি করার। সে তাড়না থেকেই তৈরি করে ফেলে ল্যাম্বারগিনি গাড়ির মডেলের আদলে এ স্পিডবোট।

গাড়ির আদলে স্পিডবোটটি তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। এ বিশাল অংকের টাকা জোগাড় করতে রাহাদের পরিবারকে বিভিন্ন এনজিও থেকে ৩ লাখ টাকা লোন করতে হয়েছে। বাকি ২ লাখ টাকার জোগান দেয় রাহাদের পরিবার ও আত্নীয়-স্বজনরা। নানির দেওয়া ৫ হাজার টাকায় শুরু হয় রাহাদের স্বপ্নের স্পিডবোট তৈরির কাজ। দীর্ঘ ৯ মাস চেষ্টার পর তৈরি হয় রাহাতের ল্যাম্বরগিনি মডেলের স্পিডবোট।

রাহাদ বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কোনো আদলে নয়, নিজস্ব ডিজাইনের গাড়ি তৈরি করতে পারবো। আমি চাই এমন গাড়ি বাংলাদেশেও তৈরি হোক।’

রাহাদের এমন কাজে গর্বিত শুধু তার পরিবার নয়, গ্রামবাসীও। তার প্রতিভা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী এমনটাই আশা সবার। স্থানীয়রা বলছেন, ছোটবেলা থেকে রাহাদ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছেন। তার তৈরি গাড়ির আদলে স্পিডবোট পানিতে চলছে। তার এই সফলতায় তারা অনেক খুশি।

ল্যাম্বরগিনি আদলে তৈরি স্পিডবোট দেখতে আসা শাকিল আহমেদ বলেন, ‘এই রকম ল্যাম্বরগিনির আদলে স্পিডবোট তৈরি করা একটি প্রশংনীয় কাজ। ল্যাম্বরগিনিতে চরে নদীতে ঘুরলাম। খুবই ভালো লেগেছে।’

রাহাদের মা রুপালী বেগম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রাহাদ এসব নিয়ে কাজ করছে। তার চাকরির প্রতি কোনো ঝোঁক নেই। বিজ্ঞান নিয়েই আগ্রহ বেশি। ছোটোখাটো জিনিস তৈরি করতে করতে সে বড় একটা বানালো। আমরা পরিবার থেকে কখনো বাধা দেয়নি। স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে ওর বন্ধুরা খেলাধুলা করলেও রাহাদ খোলাধুলা করে না। স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে এসব তৈরি করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রাহাদের তৈরি করা জিনিস যেন বিশ্বে ছড়িয়ে যায় সেই আশা করেন তিনি।

আরও পড়ুন

ছবি তুলেই আয় করছেন সেজান
৩৪ বছর হাতের নখ কাটেন না তিনি

আনোয়ার আল শামীম/ কেএসকে/এমএস

Read Entire Article