শরীরে নীরব ঘাতক ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, জেনে নিন ৮ লক্ষণ
দিনভর দৌড়ঝাঁপ, অফিস,কাজ সামলে বাসায় ফেরা। এমন অবস্থায় শরীরটা ভেঙে পড়ছে, সব সময় ক্লান্তি পেয়ে বসছে। ভেবে নিচ্ছেন হয়তো গরমে পানিশূন্যতা হয়েছে বা ঘুমের ঘাটতি থেকে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা যদি ভেতরে লুকিয়ে থাকে— যে সমস্যার নাম ক্রনিক কিডনি ডিজিজ?
আমাদের শরীরের ভেতরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলা দুটি অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিদিন অগণিত বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন ছেঁকে শরীরকে সুস্থ রাখে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই অঙ্গ। তবে এই ছোট্ট ‘ফিল্টার’ যখন আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে, তখন শরীরে জমে যায় বিষাক্ত উপাদান। ধীরে ধীরে ধরা দেয় দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)।
বিশেষজ্ঞরা একে বলেন ‘নীরব ঘাতক’। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগে সাধারণত কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। যখন ধরা পড়ে, তখন রোগ অনেকটাই এগিয়ে যায়।
তবে চিকিৎসকদের দাবি, সচেতন থাকলে আগেভাগেই চেনা সম্ভব কিডনি দুর্বল হওয়ার কিছু সংকেত।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ ও লক্ষণ
ক্রনিক কিডনি ডিজিজে কিডনি ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। রক্ত থেকে বর্জ্য ছেঁকে ফেলার কাজ কমে গেলে শরীরে জমে যায় টক্সিন। অথচ কিডনি শুধু বর্জ্যই ছাঁকে না— এটি হরমোন উৎপাদন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা তৈরি এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে। তাই কিডনি অসুস্থ হলে শরীরে শুরু হয় নানা জটিলতা।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ বোঝা কঠিন হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় কিছু লক্ষণ—
১. ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন
২. সব সময় ক্লান্তি ও দুর্বলতা
৩. ক্ষুধামন্দা
৪. হাত-পা ও চোখে ফোলা
৫. প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা বুদবুদ হওয়া
৬. চুলকানি, শুষ্ক ত্বক
৭. মনোযোগে সমস্যা, ঘুমে ব্যাঘাত
৮. বমি ভাব, পেশি টান, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রধান দুটি কারণ হলো, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ হলো—
১. গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
২. পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (জেনেটিক সমস্যা)
৩. প্রস্রাবের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া (পাথর, প্রস্টেট বা টিউমার)
৪. দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
৫. পুনরাবৃত্ত কিডনি সংক্রমণ
এসব কারণে জটিলতা বাড়লে দেখা দিতে পারে অ্যানিমিয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, গাউট, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি, স্নায়ুর ক্ষতি, এমনকি শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসা
কিডনি রোগের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেকদিন ধরে রাখা সম্ভব। এজন্য দরকার নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ, ডায়াবেটিস-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কিডনিবান্ধব খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ, ধূমপান-মদ্যপান পরিহার এবং ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ।
প্রতিরোধের উপায়
১. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
২. রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
৩. সুষম খাদ্য গ্রহণ
৪. ধূমপান-মদ্যপান বর্জন
৫. ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
৬. অকারণে ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়া
শেষকথা
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ একবার শুরু হলে তা আজীবন চলতে থাকে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা, নিয়মিত পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক দিন সক্রিয় রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, কিডনি রোগ যতটা ভয়াবহ, ততটাই প্রতিরোধযোগ্য। তাই সচেতন হোন, নিজের এবং পরিবারের কিডনির যত্ন নিন।
সূত্র : ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক