সরকারি ক্রয় নীতিতে আসছে আমূল পরিবর্তন

3 hours ago 3
সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ২০০৮ সালের বিদ্যমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার (পিপিআর) জায়গায় আসছে নতুন ‘পিপিআর-২০২৫’। নতুন খসড়ায় ৯৪টি সংশোধনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ১২টি নতুন বিধি। বাতিল হয়েছে ৭টি বিধি। সংযোজন হয়েছে ৪টি নতুন তপশিল, সংশোধন হয়েছে আরও ৮টি। পাশাপাশি ১৮টি উপধারা বাতিল করে মোট ১৫৩টি বিধি নিয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কাঠামো।  খসড়া বিধিমালা নিয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করতে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আইএমইডি সম্মেলন কক্ষে কর্মশালার আয়োজন করে বিপিপিএ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ। বিপিপিএর পরিচালক শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম খসড়া বিধিমালার মূল বিষয়গুলো সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।  কর্মশালায় দেশের জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার ৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক অংশ নেন। আইএমইডি সচিব বলেন, চলমান সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করার উদ্দেশ্যেই এ কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। বিপিপিএর সিইও প্রস্তাবিত বিধিমালার যৌক্তিকতা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।  বিপিপিএর পরিচালক শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম বলেন, খসড়া বিধিমালায় উল্লেখযোগ্য সংস্কারের মধ্যে রয়েছে সব সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা। অনলাইনের বাইরে দরপত্র আহ্বান বা চুক্তি করার সুযোগ থাকবে না, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বিপিপিএর অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া আগে প্রাক্কলিত মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পার্থক্যের সীমা ছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে। অতিরিক্ত কাজ বা সরবরাহের জন্য নতুন ধারা তৈরি করা হয়েছে এবং ভেরিয়েশনের সীমা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুনভাবে ভৌত সেবা বা শ্রমঘন সেবাকে আলাদা ক্যাটেগরি হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির পরিসর বিসত্মৃত করা হয়েছে এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে বিপরীত নিলাম প্রক্রিয়া চালুর বিধান রাখা হয়েছে। নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংযোজনও অন্যতম পরিবর্তন। চুক্তি ব্যবস্থাপনায় যোগ হয়েছে কঠোরতা। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা বা উপকারভোগী মালিকের নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি সম্পদ বিক্রি বা নিষ্পত্তির নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। পাশাপাশি, চুক্তি বাতিলের আগে স্বতন্ত্র কমিটির সুপারিশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি জানান, নতুন ক্রয় নীতিতে দরকষাকষির সুযোগও বাড়ানো হয়েছে। ভৌত সেবা, আন্তর্জাতিক ক্রয়, বিভাজনযোগ্য পণ্য কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জরুরি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরকষাকষির বিধান রাখা হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্তকরণ ও সাময়িক স্থগিতাদেশের বিধান আরও কঠোর করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ডিবারমেন্ট রিভিউ বোর্ড গঠনের প্রসত্মাব এসেছে। বিপিবিএ বলছে, পুরো খসড়ায় ৯৪টি বিধি সংশোধন করা হয়েছে। নতুন করে ১২টি বিধান যুক্ত হয়েছে, বাতিল হয়েছে ৭টি বিধি এবং বাদ গেছে ১৮টি উপবিধি। এ ছাড়া ৪টি নতুন তপশিল সংযোজন এবং ৮টি সংশোধনের প্রসত্মাব রয়েছে। ফলে সরকারি ক্রয় কাঠামো আরও বিসৃত ও সময়োপযোগী হয়ে উঠবে। বিপিপিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত পিপিআর, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে সরকারি ক্রয় আইন, ২০০৬-এর সংশোধনের ধারাবাহিকতায়। ওই সংশোধনটি সরকারি ক্রয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর মাধ্যমে আনা হয়, যা গত ৪ মে গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যমান সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮-কে সংশোধিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে ওঠে।  এই খসড়া বিধিমালার লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ও সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ ক্রয়ের বিধান রাখা হয়েছে। সরকারের আশা, এ উদ্যোগ সরকারি অর্থব্যবস্থায় সুশাসন ও দক্ষতা বাড়াবে।
Read Entire Article