রাজধানীর গাবতলীতে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির সামনে শাহী মসজিদ বস্তিতে দেড়শ পরিবারের বসবাস। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৩৬ মিনিটে হঠাৎ করেই আগুন লাগে বস্তিতে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটেলেও আগুনে নিঃস্ব হয়েছে অসংখ্য পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে পিয়ারা বেগম। স্বামী সিদ্দিক মিয়া মারা গেছেন তিন বছর আগে। পিয়ারা বেগমের জন্ম কিশোরগঞ্জের মিঠামইন। বয়স ৫০ পেরিয়েছে। পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাই সরিয়ে খুঁজছিলেন কিছু অবশিষ্ট আছে কি না।
দীর্ঘ ২০ বছর এই বস্তিতে বসবাস করছেন পিয়ারা বেগম। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিল তিল করে সংসার সাজিয়েছিলেন। বাসায় ছিল টেলিভিশন, ফ্রিজ, খাট, আলনাসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। নিমিষেই সব পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘরের টিন ও লোহা মিলিয়ে ২২ কেজি হয়েছে। যা বিক্রি করে পেয়েছেন ২ হাজার ৮০০ টাকা। ২০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্পদের মূল্য এখন মাত্র ২ হাজার ৮০০ টাকা!
কথা হয় পিয়ারা বেগমের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘ঘরে খাট আছিল, ল্যাপ আছিল, হাড়ি-পাতিল ২০ বছরে কামাই কইরা যা জুড়াইছি (সঞ্চয়) সব শ্যাষ। টিভি, খাটসহ লাখ টাকার মাল ছিল। এখন আর কিছুই নেই।’
- আরও পড়ুন
গাবতলীতে আগুনে পুড়লো বস্তির দেড়শো ঘর, দুটি বাস
জামিনের পর পাগড়ি ও ফুলের মালায় অর্ণবকে বরণ করলো ‘তৌহিদি জনতা’
আগুন কীভাবে লাগলো এই প্রসঙ্গে পিয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মনে হয় ঘরের পিছন দিয়া কেউ আগুন লাগাইছে। সামনে দিয়া আগুন লাগলে একজন না একজন দেখতে পাইতো। দুই মাস আগে কইছিল যাইবার লাইগা। তারা কইছে বস্তি ছাইড়া দেও। দুই মাস হইচে আমরা গেছি না, এহন হ্যারা গোপনে আগুন লাগাই দিছে।’
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বদর উদ্দিন, গরু পালন করে কোনো রকম সংসার চালান। এখন নিজের মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই, চারটি গরু কোথায় রাখবেন সেই চিন্তায় পাগলপ্রায়।
জাগো নিউজকে বদর উদ্দিনের মেয়ে শাহনাজ বলেন, সিন্ডিকেট করে আগুন লাগানো হয়েছে। পেট্রোল ড্রাম দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বিচার হবে না।
জন্মের পর থেকেই এই বস্তিতে বেড়ে উঠেছেন আসমা বেগম। বয়স এখন ৪০ ছুঁই ছুঁই। দুই সন্তান নিয়ে এখানেই বসবাস করেন তিনি। বস্তিতে তার একটা দোকান ছিল। আগুনে দোকানসহ বাসায় খাট, ফ্রিজ, টিভি, নগদ কয়েক লাখ টাকা পুড়ে গেছে।
আসমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংসারে অনেক কিছু ছিল। খাট, টিভি, ওয়্যারড্রোব সবকিছু শেষ। ব্যাংক থেকে ৯ লাখ টাকা তুলছি জমি কেনার জন্য, সব কিছুই পড়ে শেষ।’
এমওএস/কেএসআর/জেআইএম