শরীয়তপুরের জাজিরার শিক্ষক রুবিনা আক্তার রুমা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন হয়। মামলা তুলে নিতে আসামিরা বাদীর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়। নিহত রুবিনা রায়েরকান্দি এলাকার মৃত মনির উদ্দিন হাচেন মুন্সীর মেয়ে।
এ সময় রুবিনার বড় ভাই সামসুল হক, ভগ্নিপতি মান্নান সিকদার, স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির হোসেন মল্লিক, স্থানীয় পতাই মাদবরসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বড়মূলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুবিনা ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে কাগজপত্র ফটোকপি করতে জাজিরা বাজারে যান। রাতে বাড়ি না ফিরলে ২৩ সেপ্টেম্বর বড় ভাই সামসুল হক জাজিরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির পাশের বাঁশবাগান থেকে রুবিনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা কামাল মাদবর ওরফে তমি কামাল (৪৭), মেহেদী হাসান (২৬), রাসেল মাদবর (৩৪), সজীব মাদবর (৩৩) ও রাকিব শাহকে (২৭) আসামি করে মামলা হয়। পুলিশ কামাল ও মেহেদিকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে ওই দুই যুবলীগ নেতা জামিনে আছেন। বাকিরা পলাতক।
জানা যায়, যুবলীগ নেতা কামাল মাদবরের সঙ্গে রুবিনার সম্পর্ক ছিল। রুবিনার ব্যাংক বীমাসহ সব আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে কামাল জড়িত ছিলেন। কামালের কাছে টাকা পেতেন রুবিনা। পরে একই উপজেলার এক ইতালি প্রবাসীর সঙ্গে রুবিনার বিয়ে হয়। একপর্যায়ে কামালের কাছে টাকা ফেরত চান রুবিনা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে কামাল ও তার লোকজন।
রুবিনার ভাই সামসুল হক বলেন, কামালের নির্দেশে মেহেদী, সজীব, রাসেল, রাকিব মিলে আমার বোনকে নির্যাতনের পর হত্যা করে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছিল। মেহেদী আদালতে হত্যার কথা স্বীকারও করেছেন। এখন মামলা তুলতে আসামিরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দাবি করছি।
হাইকোর্টে বাদীপক্ষের আইনজীবী খান মাহমুদুল হাসান বলেন, বিবাদী পক্ষ পুলিশের দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছিল। সেই রিট গত আগস্টে খারিজ করেন হাইকোর্ট। এখন মামলার পরবর্তী কার্যক্রম জেলার নিম্ন আদালতে পরিচালিত হবে। শরীয়তপুরের সেশন জজকে দুই মাসের মধ্যে এ মামলায় আগে পুলিশের দেওয়া চার্জশিট বহাল থাকা কিংবা পুনঃতদন্ত হওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জাজিরা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিএম এনামুল হক বলেন, আমাদের সহকর্মী রুবিনা আক্তারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আশা করি, হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে।
নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চের আহবায়ক জামাল মাদবর কালবেলাকে বলেন, রুবিনা আক্তার হত্যার ৬ বছর চলে গেল। এখনো চাঞ্চল্যকর হত্যার বিচার হলো না। আশা করি, অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জাজিরা থানার ওসি মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ বলেন, যতটুকু জানি মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলার ব্যাপারে আদালত যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।