সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠান দুটির শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুযায়ী জড়ো হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আহত হয়েছে অনেকে। কয়েকজন নিহত হওয়ার দাবিও করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, একদিন আগে ঘোষণার পরও পুলিশ কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিলো না। পুলিশ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে ঘটনা এতদূর গড়াতো না।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী গিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান। সেখানে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাঁধে।
সরেজমিনে দুপুর থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মোল্লা কলেজে নির্বিঘ্নে ভাঙচুর চালাতে দেখা গেছে। তাদের বাধা দেওয়া বা রাস্তায় আটকাতে পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাইকিং করে মোল্লা কলেজে ভাঙচুর চালায়।
এর আগে ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জেরে রোববার (২৫ নভেম্বর) পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের দিনের হামলার জেরে সোমবার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শুরুতে হামলাকারী শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েননি। দুপুর একটার কিছু আগে তাদের ধাওয়া দেয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত আছেন।
ডিএমপি এ দাবি করলেও কার্যত ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বক্তব্যের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের বাধা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ধরনের বিধি-নিষেধে পড়তে দেখা যায়নি।
ডিএমআরসি কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর সাংবাদিকদের জানান, সোমবার দুপুরের দিকে কলেজে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কত ক্ষতি হয়েছে তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না।
পুলিশের কাছে কোনো সহায়তা চেয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোববার রাতে কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যান পুলিশের কাছে সহযোগিতা চান। কিন্তু পুলিশ আমাদের আশানুরূপ সহযোগিতা করেনি। যদি প্রশাসন সহযোগিতা করতো তাহলে এই ভয়াবহ অবস্থা হতো না।
হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমাদের বাচ্চা ছেলের ওপর হামলা চালিয়েছে। হতাহত শতাধিক।
স্থানীয়রা জানান, শুরুতে যদি পুলিশ হামলাকারীদের নিবৃত করতো তাহলে এই ধরনের ভয়াবহ অবস্থা হতো না। আগে থেকে পুলিশের প্রস্তুতি ছিল না অথবা পুলিশ নিস্ক্রিয় ছিল।
পরে এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘোষণার পর থেকে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে।’
রোববার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছিল অভিযোগ তুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেন্ট গ্রেগরিতে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সোহরাওয়ার্দী কলেজের একদল শিক্ষার্থী ওই হামলা চালান।
এ হামলার নিন্দা জানিয়ে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে বহিরাগত ৩০/৩৫ জন উশৃঙ্খল যুবক নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে। এসময় তারা নিরাপত্তাকর্মী নাজমুল হক ও সুমন গোমেজকে ব্যাপক মারধর করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
টিটি/এএসএ/এএসএম