শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি পরিবার থেকেই। আগে শিশুকে বর্ণমালা শেখানো হতো আদর্শলিপি দিয়ে। ধীরে ধীরে শিশু সেখান থেকে বর্ণমালার সঙ্গে পরিচিত হতো। এখন যুগ বদলেছে। শিক্ষায় এসেছে নতুনত্ব। নতুনত্বের ছাপ পড়েছে শিশুর লেখাপড়ায়ও।
আদর্শলিপি থেকে বেরিয়ে বর্তমানে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম। তথ্য প্রযুাক্তির এই যুগে শেখানোর রীতিতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন যে কোনো কিছু শিশুকে শেখানো বেশ কঠিন। তাই তাকে এমনভাবে শেখাতে হবে যেন সে সত্যিই আগ্রহ পায়। সঠিক বয়সেই শিশুকে বর্ণমালা শেখাতে হবে। যাতে সে শেখার প্রতি আগ্রহ না হারিয়ে ফেলে। এতো কিছু বলার পেছনে কারণ হলো আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ১৯৬৭ সাল থেকে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কো কর্তৃক নির্ধারিত এ বছর সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার’।
সাক্ষরতা হচ্ছে মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি। এর মানে হলো অক্ষর–পরিচিতি, লেখা ও পড়ার ক্ষমতা অর্জন করা। সোজা কথায়, ন্যূনতম অক্ষরজ্ঞানের ধারণা থাকাই সাক্ষরতা।
শিশুকে সহজ করে বর্ণমালা শেখাবেন যেভাবে -
খেলার মাধ্যমে শেখানো
শিশুর বয়স যখন আড়াই বছর তখনই বর্ণমালার সঙ্গে পরিচিত করাতে পারেন। বিভিন্নভাবে শিশুকে বর্ণমালা চেনাতে পারেন। ছড়া ও গানের মাধ্যমে অক্ষর শেখাতে পারেন। এই বয়সে শিশুকে যা শেখাবেন তাই সহজে ধারণ করবে।
শিক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করে
শুধু বইয়ে নয়, পত্রিকা বা কোনো পোস্টার দেখিয়ে শিশুকে বর্ণমালা শেখাতে পারেন। এতে শিশু আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারবে। তাকে যদি নিজ থেকে বর্ণমালা খুজে বের করতে বলেন সে সেটা করবে এবং কখনোই ভুলবে না। আধুনিক অনেক সামগ্রী পাওয়া গেলেও শিশুকে পুরোনো শ্লেট ও চকের মাধ্যমেও বর্ণমালা লেখাটা শেখাতে পারেন। এতে সহজে বর্ণের গঠন ও আকার লিখতে পারবে।
রঙের মাধমে
শিশুরা রঙিন ছবিযুক্ত বই নাড়াচাড়া করতে ভালোবাসে। শিশুকে বর্ণমালার রঙের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। বর্ণমালাগুলোর কিছু ছবি বাঁধিয়ে রাখতে পারেন ঘরে। একেকটি বর্ণ একেকটি রঙের করতে পারেন। শিশু তাহলে খেলতে খেলতে রং চিনে বর্ণ শিখতে পারবে। এ খেলায় সে পাবে আবিষ্কারের আনন্দ।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে
শিশুদের জন্য তৈরি করা বিভিন্ন শিক্ষামূলক অ্যাপ, যেমন- বাংলা বর্ণমালা ও সংখ্যা শেখার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া শিশুকে বেশি বেশি কার্টুন, গল্প, ছড়া, কবিতা, অভিনয় ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আনন্দময় পরিবেশে শেখাতে হবে। যা শিশুদের শেখাকে সহজ ও মজাদার করে তোলে।
বাংলা বর্ণমালা দিয়ে
অনেকে শিশুকে শেখানোর জন্য বাংলা বর্ণমালা না শিখিয়ে প্রথমে ইংরেজি বর্ণগুলো শিখিয়ে থাকেন। তাদের ধারণা, ইংরেজি বর্ণগুলো শিশুরা সহজে শিখতে পারবে। আবার শিশুর বিদেশি বর্ণ বা ভাষা আয়ত্ত করা অনেকের কাছে আনন্দের হয়। এটা ঠিক নয়। বরং প্রথমে বাংলা বর্ণ শেখাতে হবে। মাতৃভাষার প্রতি শিশু শ্রদ্ধাশীল হবে। এছাড়া বাংলায় বর্ণমালা শেখানোর সময় ভুল উচ্চারণ করা যাবে না। শিশুও ভুলটাই শিখবে। তাই আগে সঠিক উচ্চারণ জেনে, এরপর শিশুকে শেখাতে হবে।
শিশুর স্কুলে ভর্তির আদর্শ বয়স
বিশ্বের একেক দেশে একেক বয়স স্কুলে ভর্তির জন্য বেঁধে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, পাঁচ বছর বয়সের আগে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ নেই। তবে প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে বা প্রি-স্কুলগুলোয় আরও ছোটবেলায় ভর্তি করা যায়। যে শিশু পটি ট্রেইনড হয়েছে, কারো সাহায্য ছাড়া খেতে পারে, একা থাকতে পারলেই সে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এছাড়া শিশু নির্দেশ পালন করতে পারে কি না, অন্যদের সঙ্গে নিজের মনের ভাব বিনিময় করতে পারছে কি না, এগুলোও স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে দেখা হয়।
সূত্র: দ্য একাডেমি অব স্কলার, বিগেন লার্নিং, শিক্ষক বাতায়ন ও অন্যান্য
এসএকেওয়াই/কেএসকে/জিকেএস