শীত বাড়ার সঙ্গে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোশকের দোকানে

3 hours ago 4

দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে অনুভূত হতে শুরু করেছে শীত। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকে ইতোমধ্যে লেপ-তোশক বানানোর কাজ শুরু করেছেন। তবে লেপ-তোশক বানানোর উপকরণের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে কারিগরদের মজুরি। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার বাড়তি দাম গুনতে হবে ক্রেতাদের।

রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা দোকানে লেপ-তোশকের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। ধুনকররাও লেপ-তোশক বানাতে শুরু করেছেন।

শীত বাড়ার সঙ্গে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোশকের দোকানে

শহরের দেওয়ান বাড়ি‌ রোডের কারিগর মিঠু মিয়া জাগো নিউজকে জানান, ৫ ফিট ৭ ফিট সাইজের জাজিম তৈরিতে মজুরি নিচ্ছেন ৩৫০-৪০০ টাকা, ৬ ফিট ৭ ফিট সাইজের জাজিমে ৪৫০-৫০০ টাকা, ৪ হাত ৫ হাত সাইজের লেপ বানানোর মজুরি ৩০০ টাকা, ৫ হাত বাই ৫ হাত সাইজের ৪০০ টাকা, ৬ ফিট বাই ৭ ফিট সাইজের তোশক ৩০০ টাকা এবং ৫ ফিট বাই ৭ ফিট সাইজের তোশক ২০০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় আইটেম ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি।

তার কারখানায় এখন দৈনিক ৮-১০ টা লেপ তৈরি হচ্ছে। অনেকে আবার পুরোনো লেপ-তোশক ঠিকঠাক করে নিচ্ছেন। শীত বাড়লে ব্যস্ততাও বাড়বে। এখন চারজন কারিগর কাজ করছেন। ভরা মৌসুমে কারিগরদের সংখ্যাও বাড়বে।

আরও পড়ুন
লেপ-তোশকের চাহিদা বেড়েছে
আসছে শীত, বাড়ছে লেপের কদর
শীতের আগমনে লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

এক বছরের ব্যবধানে মজুরি বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মিঠু মিয়া বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামতো কমে না। আগের মতো ব্যবসাও নেই। এখন অনেকে রেডিমেডের ওপর নির্ভর করেন। বছরের এ সময়টা ধুনকরদের আয়ের একটা সময়। একজন কারিগরের সারাদিনের আয় দিয়ে যদি ঠিকমতো সংসারের খরচ না জোটে তাহলে তো তারা এ পেশা ছেড়ে দেবেন। এছাড়া লেপ-তোশক বানানোর যে উপকরণ তার দাম প্রতিবছর বাড়ছে। এসব কারণে এবার মজুরি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে মৌসুমী কারিগরদের কাছে কিছুটা কম মজুরিতে মিলছে লেপ-তোশক।’

নগরীর কুটিরপাড়ার মৌসুমী কারিগর মেহের নিগার বলেন, শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে তাদের কাছে অর্ডার আসে। শীতের এ সময়টা তাদের ব্যস্ততা বাড়ে। তবে শীত এখনো পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় তেমন চাপ নেই। প্রতিদিন ৪-৫টা করে লেপের অর্ডার পাচ্ছেন। ভরা শীতে ১৫-২০টা পর্যন্ত লেপ বানাতে হয়। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে জায়গা, সুতা ও শ্রমিকদের তৈরি করা হয়েছে।

মেহের নিগার বলেন, ‘শহরের ধুনকরদের তুলনায় এ এলাকায় মজুরি কিছুটা কম। এখানে পুরুষরা অন্য কাজ করলেও বাড়ির নারীরা বছরের এ সময়টা লেপ-তোশক বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। ঘরে বসে না থেকে এতে তাদের বাড়তি যা আসে তা সংসারের কাজে লাগে। তবে আগের মতো হাঁকডাক নেই এখন। অনেকেই গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় লেপ-তোশক তৈরি করছেন।’

শীত বাড়ার সঙ্গে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোশকের দোকানে

হাঁড়িপট্টি রোডের জননী বস্ত্রালয়ের এনামুল হক জাগো নিউজকে জানান, ‘লেপ-তোশক তৈরির উপকরণ- তুলা, কাপড়ের দাম সামান্য বেড়েছে। তবে সামনের দিনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এনামুল হক জানান, ‘৫ ফিট ৭ ফিট সাইজের জাজিম বানাতে খরচ পড়ছে ২৩০০-২৫০০ টাকা, ৬ ফিট বাই ৭ ফিট সাইজের জাজিমে পড়ছে ৩০০০-৩৫০০ টাকা। পাঁচ বছর আগেও ৪ হাত ৫ হাত সাইজের রেডিমেড লেপ বিক্রি হতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। অর্ডার দিয়ে বানানো ওই সাইজের লেপ গত বছর ১২৫০-১৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘৫ হাত বাই ৫ হাত সাইজের রেডিমেড লেপ ছিল ১১০০ টাকা, এখন হয়েছে ১২০০ টাকা। অর্ডার দিয়ে ওই সাইজের লেপ বানালে খরচ পড়বে ১৮০০-২০০০ টাকা। আর লেপের কভারসহ সেটা বিক্রি হবে ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম পড়বে।’

শালবন মিস্ত্রীপাড়া মোড়ের লেপ-তোশক বিক্রেতা রাজা মিয়া বলেন, লেপ বানানোর ভালো মানের লাল শালুর গজ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা ও মাঝারি মানেরটা ৪৫-৫০ টাকা। যা গত বছর ৫৫ ও ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। তোশক বানানোর কাপড়েও প্রতি গজে দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। জাজিম বানানোর কাপড়ের দাম বেড়ে ৯০-১০০ টাকা থেকে হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা।’

সিও বাজারের লেপ-তোশক বিক্রেতা আরমান হোসেন বলেন, ‘এখন আগের মতো এ ব্যবসায় লাভ নেই। অনেক ফরিয়া ব্যবসায়ী গ্রামে ফেরি করে লেপ-তোশক বিক্রি করছেন। বাড়িতে হাতের কাছে জিনিস পেলে তো কষ্ট করে দোকানে আসতে হচ্ছে না। যদিও নিম্ন আয়ের মানুষজন তাদের বড় ক্রেতা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গার্মেন্টসের ঝুট বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২২-২৫ টাকা, ভালো মানের কালো ব্লেজার তুলা ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা, লেপের তুলা ৭৫-৮০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা।

জিতু কবীর/আরএইচ/জিকেএস

Read Entire Article