শুধু নামেই পড়ে আছে ‘ধানসিঁড়ি’, নেই জীবনানন্দ চর্চার সুযোগ

3 hours ago 4

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের বরিশালের ‘ধানসিঁড়ি’ বাড়িটি এখন শুধু নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাড়িটি পুনরুদ্ধার করে সেখানে সরকারি উদ্যোগে জীবনানন্দ গবেষণা কেন্দ্র ও জীবনানন্দ চর্চার ব্যবস্থা করার‌ দাবি জানিয়েছেন সাহিত্য সংশ্লিষ্টরা।

বরিশাল কবিতা পরিষদের সভাপতি ছড়াকার তপংকর চক্রবর্তী বলেন, জীবনানন্দ দাশ শুধু বাংলা সাহিত্যের নয়, তিনি বিশ্ব সাহিত্যের বড় মাপের কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যের একটি পরিচয়। জীবনানন্দ দাশের ছয় বিঘা জমির ওপর বাড়ি ছিল। তার ১০ শতাংশ জমির ওপরে তার নামে একটি মিলনায়তন হয়েছে। বাকি জমি বেহাত হয়ে গেছে। সরকার উদ্যোগী হলে যতটুকু জমি পুনরুদ্ধার সম্ভব তা উদ্ধার করে একটি গবেষণা কেন্দ্র করে দেওয়া যায়। যাতে এই প্রজন্ম জীবনানন্দ চর্চার সুযোগ পায়। আশা করি সরকার এই উদ্যোগ নেবে।

আরও পড়ুন:

ধানসিঁড়ি সীমানা থেকে কমিয়ে খনন করা হয়েছে কি না, তদন্তের নির্দেশ
অভিভাবকহীন জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা

প্রাবন্ধিক দেবাশীষ হালদার বলেন, শিল্প-সংস্কৃতি রক্ষা করার মধ্য দিয়েই জাতির মানসিকতা গড়ে ওঠে। অতীতের মানুষের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করা জাতীয় দায়িত্ব। জীবনানন্দ দাশ আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। তার বাড়ি পুনরুদ্ধার করা সরকারের দায়িত্ব।

শুধু নামেই পড়ে আছে ‘ধানসিঁড়ি’, নেই জীবনানন্দ চর্চার সুযোগ

বিএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঙ্গীতা সরকার বলেন, ‘জীবনানন্দ এখন কারও কারও কাছে পড়ার টেবিলে মোটা সাজানো বইয়ে আবদ্ধ হয়ে আছে। আমরা ভেতর থেকে জীবনানন্দকে ধারণ করি না। যখন ডায়লগ দেওয়ার প্রয়োজন হয় আমি জীবনানন্দের কাছে ছুটে যাই, দেশপ্রেমের জায়গা প্রকাশের জন্য, বাংলাকে প্রকাশের জন্য, আমার বরিশালকে প্রচারের জন্য জীবনানন্দের কাছে ছুটে যাই। আমরা ফেইসবুক স্ট্যাটাসের জন্য জীবনানন্দের লাইন খুঁজি কিন্তু জীবনানন্দকে ধারণ করি না। এই চর্চার জায়গাটায় অনেক কমতি আছে, এই নতুন প্রজন্মের মধ্যে জীবনানন্দকে তুলে ধরতে হবে।

সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নূরুল আমীন মোল্লা বলেন, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের কবিতার মধ্যে জীবনানন্দ একজন শক্তিমান কবি। জীবনানন্দকে এড়িয়ে বাংলা সাহিত্য কাব্যচর্চা সম্ভব নয়। জীবনানন্দকে জনপ্রিয় করা, প্রসারিত করা বা প্রচারিত করার যোগ্যতা আমাদের নেই। বরং জীবনানন্দকে চর্চা করে আমরা জনপ্রিয় হতে পারবো, বোদ্ধা হতে পারবো।

বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় এর সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মনন অধিকারী বলেন, হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, আমরাও হয়ত অনেক বছর ধরে জীবনানন্দ দাশকে খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না। ‘ধানসিঁড়ি’ তার বাড়িটার নাম, নামেই আছে, আসলে বাড়িটার অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাই না ঠিকমতো। জীবনানন্দ দাশের নামে মিলনায়তন আছে, তা ওই পর্যন্তই, তার জন্য আমাদের যা করণীয় তা আমরা করতে পারি নাই। বাংলা সাহিত্যে এই মুহূর্তে রূপসী বাংলার এই কবিকে প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মকে বাংলা সাহিত্যের প্রকৃতি, উপমা, চিত্রকল্প এইসব জানানো প্রয়োজন।

শুধু নামেই পড়ে আছে ‘ধানসিঁড়ি’, নেই জীবনানন্দ চর্চার সুযোগ

তবে বাড়ির বাসিন্দা জলিল ফারুক বলেন, জীবনানন্দ দাশের পরিবার আমাদের তাদের জমি ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে ৬ হাজার টাকায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে গেছেন। এজন্য পরবর্তীকালে এই সম্পত্তি আর কেউ আমাদের কাছ থেকে নিতে পারেনি।

আরও পড়ুন:
বনলতার শহর নাটোর
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় মনস্তত্ত্ব

তিনি বলেন, তাদের মোট জমি ছিল ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ আমরা কিনে রেখেছি। বাকি ৫২ শতাংশ জমি এখনো সরকারের দখলে রয়েছে। জীবনানন্দ দাশ চলে যাওয়ার পরে এই বাড়িতে খ্রিস্টানরা থাকতেন। এরপরে আমরা উঠেছি।

শুধু নামেই পড়ে আছে ‘ধানসিঁড়ি’, নেই জীবনানন্দ চর্চার সুযোগ

জীবননানন্দ দাশের জমি সরকারের পুনরুদ্ধার করা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িওতো বরিশালে আছে। সেটা কি সরকার পুনরুদ্ধার করেছে?

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, জেলা পরিষদ কেবল জীবনানন্দ দাশের বাড়িতে নির্মিত মিলনায়তনের পাঠাগারের দায়িত্বে আছে। সেটা কিছুটা পুরাতন হয়ে যাওয়ায় সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন ফার্নিচার ও সংস্কার কাজ করা হবে।

বরিশালে জন্ম নেওয়া কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৪৭ সালে কলকাতা চলে যান। তিনি বা তার পরিবার বরিশালের বগুড়া রোডের জমি কারো কাছে বিক্রি করে গেছেন বলে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দেশভাগের পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে এখানকার বাসিন্দারা দখল করেন।

শাওন খান/এমএন/জেআইএম

Read Entire Article