ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চব্বিশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের কঠোর শাস্তি ও বিচার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ যারা গণহত্যা ও নির্যাতনের নির্দেশদাতা বা সরাসরি অংশ নিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি ও বিচার করতে হবে।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দেওয়া জবানবন্দিতে নিজের ওপর হওয়া নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে এ দাবি জানান তিনি।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ জবানবন্দি দেন তিনি। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে বিচার চেয়ে তিনি তার জবানবন্দি আজ দ্বিতীয় দিনের মতো শেষ করেন।
জবানবন্দি শেষে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের কাছে ভিকটিমদের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছি। শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রধানদের দায়ী করেছি। যারা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছে তাদের দায়ী করেছি। তাদের বিচার ও কঠোর শাস্তি আদালতের কাছে প্রত্যাশা করেছি।
- আরও পড়ুন
‘মার্চ টু ঢাকা’ ৬ থেকে ৫ আগস্ট কেন, জানালেন নাহিদ ইসলাম
শেখ হাসিনার মামলায় নাহিদ ইসলামের পরবর্তী জেরা ২১ সেপ্টেম্বর
এরআগে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রথম দিন আংশিক জবানবন্দি দেন নাহিদ ইসলাম। প্রথম দিনের জবানবন্দির বিষয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ৪৭তম সাক্ষী নাহিদ ইসলাম আন্দোলনের এক নম্বর সমন্বয়ক। তিনি তার জবানবন্দি আংশিক দিয়েছেন। জবানবন্দির শুরুতে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন বর্ণনা দিয়েছেন। তারপর বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের বর্ণনা শুরু করেছেন। যার কিছু অংশ তথা ১৯ জুলাইয়ের কিছু অংশ পর্যন্ত বর্ণনা দিয়েছেন।
আজ তার জবানবন্দির পেশ করার পর বিকেলে নাহিদ ইসলামকে জেরা করেন এ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আজকের জেরা শেষে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী জেরার জন্য আগামী রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দিন ঠিক করেন।
এর আগে বুধবার ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দি ও জেরা শেষ হয়েছে। এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। অপর প্রসিকিউটররা শুনানিকালে উপস্থিত ছিলেন। মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এ মামলার ৩৬তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
এফএইচ/এমএএইচ/জেআইএম