ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ হোক

1 month ago 19

জামায়াত-বিএনপির দীর্ঘদিনের ক্ষমতায় না থাকার যে ক্ষোভ এবং অপ্রাপ্তি রয়েছে সেটির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা চাচ্ছিল যে কোটা সংস্কার আন্দোলন যেকোনোভাবেই ঘোলাটে হয়ে যাক। সরকারের পক্ষ থেকে সরলভাবে সমাধানের চিন্তা থাকার পর বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যে, সহজ বিষয়কে কিছুটা সরলভাবে দেখতে গিয়ে যে অনাকাঙ্খিত পরিবেশ ও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমরা সত্যিই শঙ্কিত এবং ব্যথিত হয়েছি।

সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী একটি সরকার এমন সরল বিশ্বাসকে কুচক্রী মহল এত নিকৃষ্টভাবে ব্যবহার করতে চাইবে সেটি ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। সরকারের এটি বুঝা উচিত ছিল সরকার-বিরোধীরা যেকোনো মূল্যে কোটা সংস্কার কিংবা বাতিলের চেয়ে বরং এই আন্দোলনকে পুঁজি করে সরকারের পতনের চিত্রটি দেখতে চায়। শুধু কোটা ইস্যু নয় যেকোনো ইস্যুতেই তারা সুযোগ নিতে চায়- সেটি ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।

এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু ওইসব কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালীও হয়নি কিংবা সেই অর্থে সফলতাও পায়নি। যেকোনো আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে সফল হতে পারলেই তার ফল ঘরে তোলা যায়। কিন্তু বিএনপি দীর্ঘদিন থেকে তেমন কোনো সফলতা ঘরে তুলতে পারছে না।

রাজনীতিতে ভুল থাকতে পারে। তবে বারবার ভুলে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়তে হয়। সেটি হতে পারে রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে কিংবা রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে। নান ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা রাজনৈতিক দেওলিয়াত্বের পর্যায়ে চলে গেছে। কোনো দল রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া না হলে দেশের উন্নয়নের প্রতীকে আঘাত হানতে পারে না।

এমনকি সাধারণ জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে পারে না। যেখানে সরকার দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে দেশের উন্নয়নে আঘাত হানা এবং জানমালের ক্ষতি করার বিষয়টি বিএনপি-জামায়াতের আরও একটি ভুল পদক্ষেপ হিসেবে দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়েছে।

সাধারণত কোনো দল ক্ষমতায় না থাকলে তাদের চেষ্টা করা উচিত নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া। তবে এক্ষেত্রে বিএনপি মোটেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না কিংবা সামনে এগোতে পারছে না। বরং তারা রাজনীতিতে বারবার ভুল করে একে অপরকে দোষারোপের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। এমনকি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবির আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়েও দোষারোপের রাজনীতি চলছে বিএনপিতে।

হানাহানি ও বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে মৌলবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্র নির্মূলের এখনই উপযুক্ত সময়। শুধু সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এর মূলোৎপাটন করা কোনোভাইে সম্ভব নয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে কোটা সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হয়েছে। প্রজ্ঞাপনও হয়েছে। মেধাবীদের জন্য ৯৩% চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের সম্মানার্থে তাদের সন্তানদের জন্য ৫% কোটার ব্যবস্থা থাকলেও সেটিও মূলত মেধাবীদের জন্যই প্রযোজ্য হবে। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এই মুহূর্তে বাংলাদেশে চাকরিতে আবেদনের উপযুক্ত বয়সী নেই বললেই চলে। ফলে বলা যেতে পারে চূড়ান্তভাবে মেধাবীদের জন্যই ৯৮% চাকরির সুযোগ থাকছে। এ থেকে স্পষ্ট যে ছাত্রসমাজের মূল দাবি যথাযথভাবে পূরণ হয়েছে।

ভয়াবহ হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে- তখন সেটি দেখে আর কারও বুঝতে বাকি থাকেনি যে ওই হামলা এবং তাণ্ডব সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়েছে। বিশেষ করে ওই সময়ের পরিস্থিতি দেখে অনুমান করা যাচ্ছিল যে একটি মহল চেয়েছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ হয়ে উঠুক। আর যত সংকটপূর্ণ হবে ততই সাধারণ জনগণকে সরকারের বিপক্ষে দাঁড় করানো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশকে যেকোনোভাবেই অনিরাপদ প্রমাণ করতেই মরিয়া রয়েছে একটি কুচক্রী মহল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অন্যতম নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল অনেক সময় নিরাপত্তার শঙ্কা হিসেবে বিবেচিত হয়।

এখানে প্রতিনিয়ত সরকারকে বিপাকে ফেলার টার্গেট নিয়ে থাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। তাতে যদি সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নও হয় তাতে তাদের মাথা ব্যথা থাকে না। এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার ঘৃণ্য প্রতিযোগিতাই অধিকভাবে লক্ষ করা যায়।

হানাহানি ও বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে মৌলবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্র নির্মূলের এখনই উপযুক্ত সময়। শুধু সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এর মূলোৎপাটন করা কোনোভাইে সম্ভব নয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/জিকেএস

Read Entire Article