সকলের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র হোক শিক্ষার্থীরা
অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সমাবর্তন ২২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী সকলকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাই। হাবিপ্রবি’র দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা একদিকে যেমন পারস্পরিক কুশল বিনিময়সহ ক্যাম্পাসের ফেলে আসা দিনগুলোর মধুর স্মৃতিচারণ ও আনন্দ-উচ্ছ্বাস করবে, অন্যদিকে ২০২৪ এর জুলাই এ ঘটে যাওয়া দেশের হৃদয় বিদারক ঘটনা স্মৃতিপটে ভেসে উঠবে। গণঅভ্যুত্থানের সেই ভয়াল দিনগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে আমিও সেই আন্দোলনের সম্মুখ সারির একজন সহযোদ্ধা ছিলাম। সমাবর্তনের শুভলগ্নে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে মহান শহীদদের আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি । শিক্ষার্থী মাত্রই স্বপ্ন থাকে শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করে একটি সুন্দর কর্মজীবন শুরু করার। অনেক শিক্ষার্থী মনে মনে ভাবেন এবং স্বপ্ন দেখেন তিনি দেশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা হবেন। নিজের
অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা
উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সমাবর্তন ২২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী সকলকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাই।
হাবিপ্রবি’র দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা একদিকে যেমন পারস্পরিক কুশল বিনিময়সহ ক্যাম্পাসের ফেলে আসা দিনগুলোর মধুর স্মৃতিচারণ ও আনন্দ-উচ্ছ্বাস করবে, অন্যদিকে ২০২৪ এর জুলাই এ ঘটে যাওয়া দেশের হৃদয় বিদারক ঘটনা স্মৃতিপটে ভেসে উঠবে। গণঅভ্যুত্থানের সেই ভয়াল দিনগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে আমিও সেই আন্দোলনের সম্মুখ সারির একজন সহযোদ্ধা ছিলাম। সমাবর্তনের শুভলগ্নে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে মহান শহীদদের আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ।
শিক্ষার্থী মাত্রই স্বপ্ন থাকে শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করে একটি সুন্দর কর্মজীবন শুরু করার। অনেক শিক্ষার্থী মনে মনে ভাবেন এবং স্বপ্ন দেখেন তিনি দেশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা হবেন। নিজের অর্জিত জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দিয়ে দেশ ও জনসাধারণের সেবা করবেন। মুখ্যত এ ভাবনা থেকে সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সর্বাপেক্ষা বেশি। তাই আমাদের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি করে আসছিল। কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় শাসক গোষ্ঠী এ বিষয়ে কোনো কর্নপাত না করে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে নানামুখী যড়যন্ত্র এবং আন্দোলন দমাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু সরকারের দমন-পীড়ন সাহসী তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের দমাতে পারেনি।
ফলশ্রুতিতে, ০৫ আগস্ট যা বহুল প্রচলিত ৩৬ জুলাই তারিখে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। আমরা অর্জন করি এক নতুন বাংলাদেশ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষাথীরা ১৯৭১-এ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আর ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে অর্জিত ফ্যসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ এর পুনর্গঠন, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও নিরাপত্তার কারিগর বা কাণ্ডারি হবেন। শুধু আমিত্ব নয়, দেশ ও দশের স্বার্থে অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে তীব্র আকাঙক্ষা নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা অদম্য হয়ে উঠবেন। আমি চাই শিক্ষার্থীরা অনাচার, অবিচার, অন্যায্য, অশুভ এবং অশুচির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন।
প্রসঙ্গক্রমে আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, অপার সম্ভাবনাময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো অনুষঙ্গ সচল করা নিমিত্ত আমার নেতৃত্বাধীন বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজন তথা শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং সকল শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং তা উত্তরণের উপায় এবং ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সকলের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের ২০০১ সালের ৩৫ নং আইনের ধারা ২ অনুযায়ী ০৮ এপ্রিলকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এ দিবসটি পালিত না হলেও আগামীতে এ দিবস আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হবে। এ দিন নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শুভানুধ্যায়ীদের অংশগ্রহণে হাবিপ্রবি এক মিলন মেলায় পরিণত হবে।
ছাত্রী হলের ভঙ্গুর নিরাপত্তা সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ ও সংস্কার, রাস্তা এবং খেলার মাঠসমূহের সংস্কার করা হয়েছে। আমার দৃঢ় ইচ্ছা যে, হাবিপ্রবি উচ্চতর গবেষণায় দেশে নেতৃত্ব দিবে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পিএইচডি শিক্ষা বৃত্তি চালু করা হয়েছে। গ্রন্থাগার ও টিএসিতে শীতাতপ ব্যবস্থা এবং হল ডাইনিং এ স্বাস্থ্যকর ও উন্নতমানের খাবার চালু করা হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং শিক্ষক সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগে মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে Ôজুলাই চত্ত্বর’, Ôজুলাই স্মৃতি স্তম্ভ’ এবং Ôজুলাই ৩৬ সড়ক’ উম্মোচন করা হয়েছে। এবারই প্রথম Ôবিজয় দিবস’ ও Ô৫ আগস্ট’- এ আবাসিক হলসমূহে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।
হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণকারীদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আবাসিক সংকট নিরসন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, একাডেমিক ভবন, গবেষণাগার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে বর্তমান প্রশাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের গভীর আগ্রহ ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে হাবিপ্রবি’র কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অর্থাৎ Ôহাকসু’ নির্বাচনের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে সমাবর্তনের মতো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সনদ অর্জন একজন শিক্ষার্থীর বহুল আকাঙিক্ষত বিষয়। এই আকাঙক্ষা আরাধ্য থাকে, যাতে তিনি সম্মানিত বোধ করেন। সম্মান এবং বিনয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে যতো বেশি সম্মানিত, সে ততো বিনয়ী। বিনয় সম্মানকে মহিমান্বিত করে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের আমি বিনয় প্রদর্শনের মাধ্যমে সকলের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
স্বনামধন্য এ বিশ^বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ২ যুগ অতিক্রম করলেও সুষম উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়েছে। বলা যেতে পারে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বিগত সরকারের উদাসীনতা এবং পর্যাপ্ত বাজেট স্বল্পতার দরুণ শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য যুগোপযোগী অবকাঠামো, একাডেমিক ভবন এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ গবেষণাগার অদ্যবধি নির্মিত হয়নি। এখনো সিংহভাগ শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত, বিশেষ করে ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের পাশর্^বর্তী গ্রামগুলোর বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে অত্যন্ত কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ সংকটসমূহ নিরসনের লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি DPP প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে সর্বশেষ PEC মিটিং এ সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
পরিশেষে এ কথা বলে নিবন্ধটি শেষ করতে চাই যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে সমাবর্তনের মতো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সনদ অর্জন একজন শিক্ষার্থীর বহুল আকাঙিক্ষত বিষয়। এই আকাঙক্ষা আরাধ্য থাকে, যাতে তিনি সম্মানিত বোধ করেন। সম্মান এবং বিনয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে যতো বেশি সম্মানিত, সে ততো বিনয়ী। বিনয় সম্মানকে মহিমান্বিত করে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের আমি বিনয় প্রদর্শনের মাধ্যমে সকলের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক : উপাচার্য, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
এইচআর/এমএস
What's Your Reaction?