সারাদিন নানান কাজে ব্যস্ততা, অপেক্ষার পর প্রিয় মানুষটি সামনে আসলে তার হাত দুটো ধরে ফেলতে চায় সবাই। কিন্তু বাইরে থেকে এসে সঙ্গীর হাত ধরে বা সন্তানকে কোলে নিয়ে তাদের বিপদে ফেলছেন না তো?
আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে সব জিনিস স্পর্শ করি, তার সঙ্গে অসংখ্য জীবাণু সংযুক্ত থাকে। খালি চোখে তা দেখা যায় না। দরজার হ্যান্ডেল, লিফট বোতাম, মোবাইল ফোন, টাকা বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের রেলিং এই জীবাণু ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম।
আজ (১৫ অক্টোবর) গ্লোবাল হাত ধোয়া দিবসে জেনে নিন কীভাবে ছোট্ট একটি অভ্যাস আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারে জীবাণু থেকে।
>> বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, সঠিকভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুলে প্রায় ৯০ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস হয়। এতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণুও মারা যায়। শিশুরা ছোট থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুললে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণজনিত রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
>> করোনার পর অনেকেই নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস হারিয়েছেন। আমাদের চারপাশে এখনও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে আছে। হাত না ধোয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাধারণত যে রোগগুলো বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে রয়েছে সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডায়রিয়া, চোখের প্রদাহ বা কনজাংকটিভাইটিস, এবং কখনও কখনও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ। কেউ যদি করোনা বা ফ্লুর মতো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাদের হাতের মাধ্যমে ভাইরাস অন্যের মধ্যে ছড়াতে পারে।
>> গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুল শিক্ষার্থী ও শহরাঞ্চলের মানুষ খাবার আগে এবং বাথরুম ব্যবহারের পরে নিয়মিত হাত ধোয়। কিন্তু বাইরে খেলার পরে, ভিড়ের মধ্যে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার পর অনেকেই হাত ধোয়া ভুলে যায়।
>> স্বাস্থ্যকর্মীরা বারবার বলছেন, সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া সব ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে বেশি কার্যকর। হাত ধোয়া রোগ ছড়ানো রোধ করার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায়। ধরুন, ভিড়ের মধ্যে বাসের হ্যান্ডেল ধরলেন, তারপর মুখ বা চোখে হাত দিয়ে ছুঁলেন - এই একটিমাত্র মুহূর্তে আপনি নিজেকে এবং অন্যকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
>> হাত ধোয়া মানে কেবল রোগ প্রতিরোধ নয়, এটি সামাজিক দায়িত্বের প্রতীকও। যখন আমরা হাত ধুই, আমরা শুধু নিজের নয়, অন্যের সুরক্ষাও নিশ্চিত করি। শিশুদের ছোট থেকেই এই অভ্যাস শেখালে তারা জীবনের বাকি সময় স্বাস্থ্যবান থাকবে। সচেতন মানুষদের মধ্যে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
>> তাই সঙ্গীর হাত ধরার আগে, শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে, খাবারের আগে বা বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার পর নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন।
আজকের দিনে একবার ভাবুন, আপনার হাতে থাকা জীবাণু কতটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সাবান ও পানি দিয়ে মাত্র ২০ সেকেন্ডের হাত ধোয়া সেই ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। একসঙ্গে সচেতন হলে সংক্রমণ কমানো সম্ভব।
তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ, সিডিসি, ইসিডিসি, রিসার্চগেট
মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/জেআইএম