সভাপতি-অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ

1 hour ago 3

নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি শফিয়ার রহমান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিউর রহমানের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলের সামনে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে সড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে বিমানের যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মজিবার রহমান চৌধুরী মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল হক অভিযোগ করেন, শফিয়ার রহমান সভাপতি হওয়ার পর থেকে স্কুলের আয় থেকে প্রতি মাসে ৫৫ হাজার টাকা সম্মানী এবং ১৫ হাজার টাকা অফিস খরচ নিচ্ছেন। এছাড়া, স্কুলের গাড়ি তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। করোনা চলাকালীন দেড় বছরের কোনো আর্থিক হিসাবও তিনি পেশ করেননি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, নিজেদের দুর্নীতি ও অনিয়ম আড়াল করার জন্য তারা প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়াই নিজেদের পছন্দের শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন। এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ জানালে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মজিবুর রহমান চৌধুরী ও সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামানকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেন। এরপর থেকে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের স্কুলে ঢুকতে দেননি।

সভাপতি-অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ

গত ২৩ সেপ্টেম্বর এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। আজ সকালে শিক্ষকরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়।

জানা যায়, শফিয়ার রহমান সরকার ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে ১.৫ কোটি টাকার বেশি আর্থিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে একটি তদন্ত করা হলে সেই অভিযোগে তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাউশি ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডকে গভর্নিং বডি ভেঙে দেওয়াসহ শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। এর প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে, সভাপতি রিয়াজুল আলম রাজুর আকস্মিক মৃত্যুর পর শফিয়ার রহমান পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করে।

শিক্ষার্থী আবির ইসলাম, তাহা এবং মৃত্তিকা জানান, শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের ক্লাস হচ্ছে না, যা তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

আখতার হোসেন রেজা নামের এক অভিভাবক বলেন, স্কুলের বেতন এমনিতেই বেশি, তার ওপর বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে বলেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিউর রহমানের ভাষ্য, যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি লায়ন্স ক্লাব দ্বারা পরিচালিত হয়, তাই তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।

অন্যদিকে, সভাপতি শফিয়ার রহমান জানান, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য ৩.৫ কোটি টাকা তিনি একাই নেননি। ওই সময় সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম এ বিষয়টি দেখভাল করছিলেন এবং এ নিয়ে একটি মামলাও চলমান আছে। তবে, তিনি প্রতি মাসে ৫৫ হাজার টাকা সম্মানী নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

আমিরুল হক/কেএইচকে/জেআইএম

Read Entire Article