শক্তিশালী দাঁত ও তীক্ষ্ণ চোখে তাকে দেখে মনে হয় যেন জঙ্গলের কোনো বাঘ বা নেকড়ে। এর কালো চামড়া, অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর চেহারা একই সঙ্গেই ভয় সৃষ্টি করে। তবে সে ডাঙ্গার কোনো প্রাণী নয়, বরং এটি একটি রহস্যময় ও বিরল প্রজাতির প্রাণী, যেটি সমুদ্রের গভীরে বাস করে। নাম তার নেকড়ে মাছ। এর অদ্ভুত চেহারা ও শিকারি প্রকৃতি তাকে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি করে তুলেছে।
এর বৈজ্ঞানিক নাম অনারহিচাস লুপাস, যা সাধারণত আটলান্টিক ওলভ ফিশ বা নেকড়ে মাছ হিসেবে পরিচিত। এটি একটি গভীর সমুদ্রের মাছ যা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ঠান্ডা পানিতে পাওয়া যায়। এর শক্তিশালী চেহারা এবং বিপদজনক দাঁত দিয়ে এটি অনেকটা নেকড়ে বা সিংহের মতো দেখতে, যার কারণে এটি নেকড়ে মাছ নামে পরিচিত।
নেকড়ে মাছের দৈহিক গঠন বিশেষভাবে শক্তিশালী এবং এর দাঁতগুলো খুবই ধারালো। এটি তার দাঁত দিয়ে শক্ত শেলের মোলাস্ক এবং ক্রাস্টেশিয়ানদের চিবিয়ে খায়। মাছটির শারীরিক আকার প্রায় ১.৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, তবে সাধারণত এদের দৈর্ঘ্য ৯০-১০০ সেন্টিমিটার হয়। এর ত্বক মসৃণ এবং খালি, যা অন্য অনেক মাছের তুলনায় ভিন্ন।
নেকড়ে মাছ সাধারণত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ঠান্ডা ও গভীর পানিতে বাস করে। বিশেষ করে কানাডা, আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড এবং নরওয়ের উপকূলে। এটি সাধারণত ২০০ থেকে ৮০০ মিটার গভীরতায় থাকে, তবে কখনো কখনো সমুদ্রের তলদেশের আরও গভীরে চলে যায়।
নেকড়ে মাছ প্রধানত মাছ, শেলের মোলাস্ক এবং ক্রাস্টেশিয়ান খায়। এর শক্তিশালী দাঁত এবং থুতনি এটি সহজেই শেলের প্রাণীকে চিবিয়ে খেতে সহায়ক। তাদের খাবারের মধ্যে প্রধানত শেলফিশ, কাঁকড়া এবং ছোট মাছ থাকে।
যদিও নেকড়ে মাছের সংখ্যা এখনো বিপদজনক অবস্থায় নেই, তবে অতিরিক্ত মৎস্য শিকার এবং প্রাকৃতিক বাসস্থানের ক্ষয়ক্ষতির কারণে এর অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। বিভিন্ন সমুদ্রভিত্তিক সংস্থা এবং গবেষকরা এই মাছের সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং একে সুরক্ষিত রাখার জন্য সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার উপর জোর দিচ্ছে।
নেকড়ে মাছ সমুদ্রের একটি বিশেষ আকর্ষণীয় প্রাণী। এর দেহের গঠন, খাদ্যাভ্যাস এবং বাসস্থান এই মাছকে সমুদ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সমুদ্রের গভীরে থাকা এই রহস্যময় প্রাণীটির প্রতি আমাদের আগ্রহ এবং মনোযোগ ধরে রাখা প্রয়োজন, যেন এর সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুন
সূত্র: এনওএএএ ফিশারিজ, মেরিনবায়ো কনসার্ভেশন সোসাইটি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
কেএসকে/এমএস