বিদেশের প্রতিটি দূতাবাসে হটলাইন ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন, প্রবাসী বিনিয়োগে অন্তত ১০ বছর ট্যাক্স-ফ্রি সুবিধা, বিদেশে মৃত্যু হলে শতভাগ সরকারি ব্যয়ে মরদেহ দেশে আনাসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপ প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবু সাঈদ রিয়াজ।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ভাঙা ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা দেশের আমদানি (বিল) পরিশোধের প্রায় ৪৫ শতাংশ মিটিয়ে দিয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, ঘামে-রক্তে প্রবাসীরা দেশের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করেছেন। তবু দেশে ফিরে তাদের অবহেলা, হয়রানি ও প্রশাসনিক জটিলতা লেগেই আছে, এই লজ্জাজনক বাস্তবতা আর চলতে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা শুধু পরিবারের ভরণ-পোষণ করেন না; তারা দেশের গ্রোথ, বিনিয়োগ, সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তারপরও প্রবাসীরা যখন সমস্যায় পড়েন—পাসপোর্ট, কাগজপত্র, মৃত্যুবরণ, সম্পত্তি রক্ষা—তখন প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রায়শই অনুপস্থিত থাকে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন
স্বল্প সময়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে প্রবাসীদের অবদান রয়েছে
সেপ্টেম্বরেও ঊর্ধ্বমুখী রেমিট্যান্স, ২৪ দিনে এলো ২৭২৫৫ কোটি টাকা
এসব কারণে তারা সরকার ও নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রবাসীদের ১৫ দফা দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করেছেন।
প্রবাসীদের ১৫ দাবি
• বিদেশের প্রতিটি দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টা জরুরি হটলাইন ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন।
• প্রবাসী বিনিয়োগে অন্তত ১০ বছর ট্যাক্স-ফ্রি সুবিধা।
• বিদেশে পাসপোর্ট নবায়ন এবং বিভিন্ন সার্টিফিকেট দ্রুত প্রদানের সুব্যবস্থা।
• বিদেশে মৃত্যু হলে ১০০ শতাংশ সরকারি ব্যয়ে মরদেহ দেশে আনতে হবে।
• প্রত্যেক দূতাবাসে দলীয়করণ মুক্ত পরিবেশ চাই; মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তির অংশগ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
• প্রতিটি জেলায় প্রবাসী সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।
• রেমিট্যান্সে অন্তত ৫ শতাংশ সরকারি ইনসেন্টিভ ও প্রণোদনা।
• প্রবাসীদের সন্তানদের শিক্ষায় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান।
• প্রবাসী পরিবারের জন্য ব্যাপক স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থা।
• পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথিপত্র সম্পূর্ণ অনলাইনে প্রদান নিশ্চিত করা।
• বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য আলাদা দ্রুতগতির ইমিগ্রেশন কাউন্টার।
• প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষায় একটি বিশেষ পুলিশ ইউনিট গঠন।
• ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা।
• সরকারি পেনশন স্কিমে প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তি।
• প্রবাসী পরিবারের জন্য সরকারি চাকরিতে বিশেষ সহায়তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এসব দাবি বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীদের জীবনমান উন্নত হবে, তাদের দক্ষতায় দেশ উপকৃত হবে এবং যারা বিদেশে আছেন তারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন করতে আরও উৎসাহী হবেন। আমরা ভুলে যেতে পারি না—প্রবাসীর ঘামে গড়া টাকা আজ দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে। তাদের অবদান উপেক্ষা মানে জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।
আবু সাঈদ রিয়াজ বলেন, আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি—শুনুন, বিচার করুন এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিন। নাগরিকত্ব ও মানবিকতার দিক থেকেই এটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আশা করি, ন্যায্য প্রতিষ্ঠায় আপনাদের সরকার আমাদের সঙ্গে দ্রুত কাজ করবেন। যদি দীর্ঘ মেয়াদে এ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে প্রবাসীরা যে শক্তি হিসেবে দেশের কল্যাণে অবদান রেখে আসছে, তারা অন্য কোনো পথ বেছে নেবে—এতে দেশের অর্থনৈতিক স্তম্ভ দুর্বল হবে, যার দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।
এনএইচ/ইএ/এএসএম