এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অজর্ন করে অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল আজ (সোমবার) গভীর রাতে দেশে ফিরছেন। ছুটি নিয়ে কোচ পিটার বাটলার লাওস থেকেই ইংল্যান্ড চলে গেছেন। পুরো আগস্ট ছুটি কাটিয়ে ফিরবেন নারী ফুটবলের সাফল্যের এই থিঙ্কট্যাঙ্ক। কোচ পিটার আর অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পিঠাপিঠি বড় ধরণের দুটি সাফল্য পেয়েছে।
টানা দুইবার সাফের শিরোপা জেতা এবং ইতিহাস গড়ে দুই বিভাগে এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা মেয়েদের বছরব্যাপি থাকতে হয় বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে। বাফুফে এই ক্যাম্পকে এলিট একাডেমি বলে থাকে। তবে মেয়েদের আবাসন ব্যবস্থা কতটা এলিট, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
মতিঝিলের বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলায় কয়েকটি কক্ষে থাকেন মেয়েরা। গড়ে পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্নজন ফুটবলার থাকেন বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলায়। এত সংখ্যক খেলোয়াড়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাট বসানোর জায়গা নেই সেখানে। যে কারণে বাফুফে তৈরি করে দিয়েছে দোতলা খাট- কেউ নিচের খাটে ঘুমান, কেউ উপরের খাটে। আপনি ভাবতে পারেন, এই মেয়েরাই দোতলা খাটে থেকে ডাবল সাফ জিতছেন, দুটি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করছেন!
বাফুফের কিছু করার নেই। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এভাবে মেয়েদের পরিচর্যা করে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, যখন তারা কেবল দক্ষিণ এশিয়ারই সেরা নন, বিজয়ের পতাকা ওড়াচ্ছেন এশিয়ান পর্যায়েও। দেশে তারা এমন পরিস্থিতিতে রাত্রি যাপন করলেও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সময় দেশে-বিদেশে থাকছেন পাঁচ তারকা, চার তারকা মর্যাদার উন্নতমানের হোটেলে।
এই তো কিছুদিন আগে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর লাওস যাওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েদের রেখে দেওয়া হয়েছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেল্টালেই। এবার আবার তাদের ফিরতে হচ্ছে পরিচিত সেই ছাদের নিচে। যেখানে এসি চালিয়ে রুম ঠান্ডার ব্যবস্থা আর প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার থাকলেও ঘুমোতে হয় দোতলা খাটে।
বাফুফের উপলব্ধি আছে, সামর্থ্য নেই। তাই তো সোমবার নারী উইংয়ের চেয়ারপারসন মাহফুজা আক্তার কিরণ বললেন, ‘আমাদের একটা আধুনিক ট্রেনিং সেন্টার থাকা দরকার। যেখানে মেয়েদের থাকার ভালো জায়গা থাকবে, ভালো ট্রেনিংয়ের সুযোগ থাকবে। আমাদের নেই মাঠ, নেই একাডেমি। আমাদের এমন একটা ট্রেনিং সেন্টার থাকা দরকার, যেখানে মেয়েদের থাকার জায়গা ভালো। জিম, সুইমিং পুল ও মাঠ থাকবে। তারা স্বাচ্ছন্দ্যে থেকে অনুশীলন করতে পারবে। আমাদের তো মাঠই নেই। সেখানে কি করে এর চেয়ে ভালো কছু আশা করা যায়? আমরা ওই লেভেল থেকে অনুপ্রেরণা দেই বলে মেয়েরা ফাইট করে।’
সিনিয়র দলের পর অনূর্ধ্ব-২০ দলের এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করায় প্রমাণ করে নারী ফুটবলের পাইপলাইন বেশ ভালো। ‘এখান থেকে একটা বিষয় প্রমাণ হয় আমাদের পাইপলাইন অনেক স্ট্রং। যে কারণে যে বছর আমাদের সিনিয়র টিম কোয়ালিফাই করলো, সে বছরই অনূর্ধ্ব-২০ দল কোয়ালিফাই করলো। এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল সঠিক পথে আছে এবং ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে।’
সব ঠিকঠাক চললেও আর্থিক বিষয়ে আছে বড় সংকট। বাফুফে মেয়েদের জন্য আধুনিক ট্রেনিং সেন্টার দরকার, বিষয়টা উপলব্ধি করলেও সেই কাজটি করে দিতে পারে সরকার। দেশের জন্য একের পর এক সম্মান বয়ে আনা মেয়েদের দিকে রাষ্ট্র থেকে নজর আসলে কোনো সংকটই থাকার কথা নয়।
সামনের বছর দুটি এশিয়ান কাপ। জুনিয়র পর্যায়ের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আছে এ বছরই। তাই বাফুফের সামনে অর্থনৈতিক বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে কিরণ বলেন, ‘আমাদের অনেক বেশি আর্থিক সহায়তার দরকার হবে। বুধবার সভাপতির সঙ্গে বসবো। দুটো দলের জন্য প্র্যাকটিস ম্যাচ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়েদের প্রস্তুতির জন্য আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে এফোর্ট দিতে হবে।’
আরআই/আইএইচএস