সাবেক আইজিপি শহীদুলসহ ৩ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ

8 hours ago 9

রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায় ২০১৬ সালে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের নামে নাটক সাজিয়ে নয়জন ইসলামী মনোভাপান্ন যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকসহ সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির কারার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

অন্য দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া এবং ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা।

আগামী ২৪ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে শুনানি হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। একই সঙ্গে আগামী ৭ মে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে আগামী ২৪ মার্চ তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৭ মে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৬ সালে কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিং নামে একটি ভবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান দেখে বেআইনিভাবে গ্রেফতারকৃত বেশ কয়েকজন ইসলামী মনোভাবাপন্ন যুবকদের ওই বাড়ির একটি ফ্লাটে আটক রাখা হয়। তাদের জঙ্গি নামে নাটক সাজিয়ে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য এবং তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই নয়জন ইসলামী মনোভাপান্ন যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মামলায় সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হকসহ সাবেক তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার দেখাতে আবেদন করেছিলাম। ট্রাইব্যুনাল আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আগামী ২৪ মার্চ এই তিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, এই তিনজন আসামি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক আছেন। তাদের ট্রাইব্যুনালের এই মামলায় নির্ধারিত তারিখে হাজির করতে বলা হয়েছে। ইসলামী মনোভাবাপন্ন যুবকদের জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হত্যা করাকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা পেয়েছে। এই জন্য ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাব্যুনালে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হত্যা করার অভিযোগে এটাই প্রথম মামলা।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের জবাবে আমরা বলেছি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দুটি উপাদান লাগে। একটি হল- সিস্টেমেটিকালী এই ঘটনা ঘটতে হয়। আরেকটি হল ওয়াইডস্প্রেডলি। এই দুটি উপদান এই ঘটনাকে কাভার করে। কারণ একটি একটি সিস্টেম ক্রাইম। এটি হল ধর্মীয় কারণে এই যুবক ব্যক্তিদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয় এবং তাদের হুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের অপরাধ ছিল তারা তৎকালীন সরকার বিরোধী মনোভাপান্ন ছিলেন। তারা ইসলামিক আইডিওলজি অনুস্মরণ করত। এজন্য তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করে এনে একটি জায়গায় আটক রেখে সবাইকে জানানো হত তারা জঙ্গি। আসলে তারা কেউই জঙ্গি ছিল না।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের অভিযানে নয়জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে বলা হয়।

ওইদিন অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক বলেছিলেন, নিহত ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। ওই বাড়ি থেকে গুলশানের মতো বড় হামলার পরিকল্পনার তথ্য পুলিশের কাছে আগে থেকেই ছিল।

এফএইচ/এমআইএইচএস

Read Entire Article