সালমান শাহকে নিয়ে বললে কথা শেষ হবে না

1 hour ago 1

প্রয়াত ঢালিউড তারকা সালমান শাহর ৫৫তম জন্মদিন ১৯ সেপ্টেম্বর। তাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ। সালমানের জন্মদিন উপলক্ষে অভিনেতা সালমান, তাদের সময়, সেদিনকার ঢালিউড ও আজকের ঢালিউড নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন এই নির্মাতা।

জাগো নিউজ: কেমন আছেন, কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?  
ছটকু আহমেদ: আমি খুব ভালো আছি। লেখালেখি করছি, গল্প করছি, আড্ডা মারছি প্রচণ্ড। অবসর সময়, ৮০ বছর পুরো হচ্ছে। এখন কাজ কমিয়ে দিয়েছি। তাই কাজকর্মের চাপ কম। এখন একটু রিলাক্সে জীবনের শেষ কটা দিন কাটাতে চাচ্ছি। মাঝে মাঝে দুই একটা স্ক্রিপ্ট আসে, করে দিই। আড্ডা দিই, সাক্ষাৎকার দিই। তবে সবই পরিচিত মানুষদের সঙ্গে। অনেকে ফোন করে, কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা এগোয় না। শরীর তো সবসময় ঠিক থাকে না। আর আমি এখন মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি।

জাগো নিউজ: সালমান শাহকে নিয়ে বানানো আপনার সিনেমাগুলো ছিল সুপারহিট। তাকে ডিরেক্ট করা আপনার জন্য কতটা আরামদায়ক ছিল? তিনি কি ডিরেক্টরস আর্টিস্ট ছিলেন, নাকি ইপ্রোভাইজ করতেন?
ছটকু আহমেদ
: সালমান শাহ ডিরেক্টরকে মান্য করতো ও অনেক শ্রদ্ধা করতো। ভদ্রলোক ছিল। ক্যারেক্টারকে বুঝবার জন্য সে অনেক প্রশ্ন করত। ক্যারেক্টারের গেটআপ কী রকম হবে, ক্যারেক্টারের স্টাইলটা কী রকম হবে, ক্যারেক্টারের বাচনভঙ্গি কী রকম হবে, এ রকম অনেক কিছু। মাঝে মাঝে আমরাও আইডিয়া চাইতাম। সালমান শাহ তার মতো করে আইডিয়া দিত।

জাগো নিউজ: সালমানকে নিয়ে করা কোন ছবিটার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রশংসা ও অর্থ পেয়েছিলেন?
ছটকু আহমেদ
: ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘বুকের ভিতর আগুন’ অর্ধেক করে মারা গেল… (আবেগাপ্লুত স্বরে)। আমার সব ছবিতে অনেক প্রশংসা ও অর্থ পেয়েছি। অনেক বয়স হয়েছে, অনেক কিছু তো মনে থাকে না। সময় চলে যায় সময়ের নিয়মে। সালমান শাহকে নিয়ে কথা বললে কথা শেষ হবে না। সে সময়ের আগে চলা মানুষ ছিল। কত কিছু ‍চিন্তা করতো। বেঁচে থাকলে হয়তো আরও ভালো সিনেমা পেতো দর্শক। আমরা আরও ভালো সিনেমা নির্মাণ করতে পারতাম।

জাগো নিউজ: আপনাদের সময়ে এত সুযোগ-সুবিধা ছিল না, যা এখন আছে। তবু এখন খুব ভালো সিনেমা কি হচ্ছে?
ছটকু আহমেদ
: এখনও ভালো সিনেমা হচ্ছে। কে বলেছে হচ্ছে না! এখন যেগুলো হচ্ছে, ওরা মডার্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে করছে। সেটা আমরা পাইনি। আমাদের অনেক সময় পুরো সিনেমার রিল নষ্ট হয়ে গেছে। তখন অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে কাজটা করতে হয়েছে। তবে আগে মানুষ অনেক সামাজিক সিনেমা দেখতো। মাধ্যম কম ছিল।

জাগো নিউজ: প্রযুক্তির এই সময় ও আপনাদের সময়ের পার্থক্যটা কী?
ছটকু আহমেদ:
এখন যে প্রযুক্তিনির্ভর গল্প হচ্ছে, আমাদের সময়ের চেয়ে ভালো ছবি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ছবি ছিল প্রাণের ছবি, মনের ছবি, হৃদয়ে দাগ থাকতো। আমরা সামাজিক গল্প বানাতাম। আমরা ভদ্রছেলেদের বানাতাম হিরো। হিরো হতো একটা বিখ্যাত ছাত্র বা একটা বিখ্যাত অফিসার বা একটা বিখ্যাত ব্যাংকার বা একটা বিখ্যাত ভদ্রলোক। কিন্তু এখন হচ্ছে কী? রঙবাজদের হিরো বানানো হচ্ছে। এখন গুন্ডা হিরো হচ্ছে, সন্ত্রাসীরা হিরো হচ্ছে। চেঞ্জটা হয়েছে, কারণ এখন তো সমাজব্যবস্থাটাই সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে।

জাগো নিউজ: নতুন নির্মাতাদের ছবি দেখছেন? কেমন করছে তারা? 
ছটকু আহমেদ: আমি ছবি দেখি। খুব ভালো কাজ করছে তারা। একটু সময় তো লাগবেই। আমি এখনকার বেশ কয়েকটা সিনেমা দেখেছি, ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘প্রিয়তমা’, ‘বরবাদ’। এসব ছবি তো অনেক ভালো ছবি। বাজেট অনেক, কিন্তু গল্প ভালো হচ্ছে না। গল্পের মধ্যে প্রাণ নেই। কিন্তু ছবির অ্যারেঞ্জমেন্ট, ছবির মেকিং আগেকার থেকে অনেক সুন্দর হচ্ছে। আগের ছবি ছিল সামাজিক পটভূমির ছবি। এখন বেশিরভাগ কাজে ভ্যারিয়েশন আসছে। খুব অ্যাকশনও আসছে। এমন অ্যাকশন আসছে যে, আমরা সেসব খেয়ে যাচ্ছি। আগে আমরা এসব বোম্বেতে দেখেছিলাম, এখন আমাদের দেশে সেরকম অ্যাকশন এসে পড়েছে।

জাগো নিউজ: ঢালিউডের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ কি এসব কারণে?
ছটকু আহমেদ
: ব্যাপারটা হচ্ছে ঢাকার সিনেমার অবস্থা খারাপ না। যেসব সিনেমা হচ্ছে, এগুলো তো সিনেমা না ভাই। এগুলো হচ্ছে, ওই যে, টেলিফিল্ম বলে না … ওই যে ওটিটির জন্য বানায় … একটুখানি এগিয়েই চিউইংগামের মতো টান দিয়ে গল্পটাকে বড় করে ছেড়ে দেয়। সিনেমাও হচ্ছে, যেমন, ‘বরবাদ’, ‘তুফান’, তারপর ধরো ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, এগুলি হচ্ছে সিনেমা। এখন ছবির মতো ছবি না বানালে ছবি চলবে না। তখন মনে হবে সিনেমার অবস্থা খারাপ!

জাগো নিউজ: নির্মাণের ইচ্ছে পূরণ হয়নি, এ রকম কোনো ছবি কি আপনার তালিকায় আছে?
ছটকু আহমেদ
: আমি গ্রামীণ পটভূমির একটা সিনেমা নির্মাণ করতে চাই।

জাগো নিউজ: এই সময়ের তরুণদের মধ্যে শাকিবকে নিয়েও আপনি কাজ করেছেন। কিন্তু শাকিবের কোনো ছবি কি সালমানের মতো জনপ্রিয় হয়েছে?
ছটকু আহমেদ
: এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কথা বললে অনেক কথা চলে আসবে। আর শাকিবের ভক্তরা না বুঝে অনেক আক্রমণ করে। সময়ই বলে দেবে। কিছু জিনিস সময়ের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

জাগো নিউজ: এফডিসি বা ফিল্ম সিটি থাকার পরও এসবের যথাযথ ব্যবহার করা যাচ্ছে না কেন বলে মনে করেন?
ছটকু আহমেদ : ব্যবহার করা যাচ্ছে না কে বললো। আমরা ওখানে আড্ডা দিই। এটাও তো ব্যবহার (হাসতে হাসতে)।

এমআই/আরএমডি

Read Entire Article