সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্র করার দাবি

2 months ago 6

সবধরনের তামাকপণ্যের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত মৃত্যু বাড়বে এবং রাজস্ব আয় কমবে। সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে দাম বৃদ্ধি না করায় ভোক্তার কমদামি সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি শুধু সিগারেট খাত থেকেই অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদসহ তামাকবিরোধী নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা আয়োজিত তামাক করবিষয়ক বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব আলোচনা উঠে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রজ্ঞা ও আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী বিগত ১ বছরে জনগণের মাথাপিছু আয় (প্রভিশনাল) বেড়েছে প্রায় ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ বাজেটে সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রাখায় তা আগের তুলনায় আরও সহজলভ্য হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে টানা ৬ষ্ঠ বারের মতো বিড়ির দাম এবং ১০ম বারের মতো এর করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে বিড়ি ব্যবসা আরো লাভজনক হবে। দাম অপরিবর্তিত রাখায় জর্দা এবং গুলের সহজলভ্যতা বাড়বে এবং এসব ক্ষতিকর পণ্যের প্রধান ভোক্তা নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য অনুযায়ী, একবছরের ব্যবধানে বিভিন্ন নিত্যপণ্য যেমন, চালের (মিনিকেট) দাম বেড়েছে ১৩.৫৭শতাংশ, সয়াবিন তেল (খোলা) ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, লেখার কাগজ (সাদা) ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ রুই মাছ ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ডিমের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অথচ তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি না করায় প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় আরেক দফা সস্তা হবে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্য।

সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোন একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। এই দুই স্তরকে একত্র করে সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২৬ সালের চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা।

ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আত্মার কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন, কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ এবং দাবি তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র হেড অব প্রোগ্রামস হাসান শাহরিয়ার।

Read Entire Article