সিরিয়ায় স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনের পর দেশটিতে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। সোমবার তুরস্কের রাজধানীতে রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এ আহ্বান জানান। খবর এএফপির।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতারা বিশেষ করে জাতিসংঘ, সিরিয়ার জনগণের কাছে পৌঁছাবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে সহায়তা করবে।’
এর আগে রোববার আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় তুরস্ক ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন হাকান ফিদান। কাতারের দোহা ফোরামে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, এটি একদিনে ঘটেনি। গেল ১৩ বছর ধরে দেশটি অশান্ত ছিল। তবে, ২০১৬ সাল থেকে, আস্তানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক পরিস্থিতি শান্ত করেছে। মূলত যুদ্ধটা আটকে রেখেছিলাম আমরা।
তিনি বলেন, এই মূল্যবান সময় সরকার নিজের জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার জন্য ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সরকার সেই সুযোগ কাজে লাগায়নি। যখন সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো, তখন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিজেই সরকারকে জাতীয় ঐক্য ও শান্তি স্থাপনের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটিও প্রত্যাখ্যাত হয়।
হাকান ফিদান বলেন, আসাদ প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের প্রয়োজন মেটানোর মতো সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। তারা মৌলিক সেবাগুলোও দিতে ব্যর্থ হয়। অর্ধেক জনসংখ্যা নিজ দেশেই বা দেশের বাইরে বাস্তুচ্যুত। এতে অভিবাসনের ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করেছে। সরকার টিকে থাকার জন্য মাদক বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করছিল।
তিনি আরও বলেন, আজ সকালে, সিরিয়া এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে সিরিয়ানরা নিজ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আজ আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সিরিয়ার জনগণ একা এটি করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের সাহায্য করতে হবে। সিরিয়া জাতীয় ঐক্য, স্থিতিশীলতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং জনগণের কল্যাণকে অনেক গুরুত্ব দেয়।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রশাসনকে সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অন্তর্ভুক্তির নীতি থেকে কখনো সরে আসা যাবে না। প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা থাকা উচিত নয়। এখন সময় একত্রিত হওয়ার এবং দেশ পুনর্গঠনের।
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজ আমরা অঞ্চলভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিক সব পক্ষকে আহ্বান জানাই যেন তারা ধৈর্য এবং শান্তভাবে কাজ করে এবং এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকে, যা এই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে। সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং ঐক্য রক্ষা করা অবশ্যই প্রয়োজন।