পাবনা-১ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন পাবনাবাসী।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ নির্বাচন ভবনের সামনে পাবনা-১ আসনের শতশত বাসিন্দা জড়ো হন। এ সময় তারা ‘ইসির অবৈধ গেজেট মানি না, মানব না’, ‘পাবনার সাঁথিয়া-বেড়া ভাই ভাই, বিভক্তি মানি না’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন।
বেড়া পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসাদ্দুজামান নয়ন বলেন, আমরা পাবনা-১ সংসদীয় আসনের বেড়া উপজেলার সর্বস্তরের জনগণে পক্ষে এখানে এসেছি আমাদের আসনের সীমানা পুনর্বহালের দাবি নিয়ে।
তিনি বলেন, বেড়া উপজেলা পরিষদ থেকে সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের দূরত্ব ৮ কিলোমিটারের কম। অন্যদিকে, বেড়া উপজেলা পরিষদ থেকে সুজানগর উপজেলা পরিষদের দূরত্ব প্রায় ৩৮-৪০ কিলোমিটার। সুতরাং ভৌগলিক বাস্তবতায় সাঁথিয়ার সঙ্গেই বেড়ার সংযোগ সবচেয়ে যৌক্তিক। এ দাবি আমাদের।
বেড়া কলেজ শাখার ছাত্রদলের আহ্বায়ক সালমান হোসেন বলেন, পাবনা ১ আসনে সাঁথিয়া ও বেড়ার (আংশিক) পূর্বের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে এখানে মানববন্ধন করছি। দাবি আদয় না হওয়া পর্যন্ত এখানে আমরা অবস্থান করবো।
সীমানা পুনর্বহালের জন্য ৭ টি কারণ তারা তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো-
১. ভৌগলিক নিকটবর্তীতা: বেড়া উপজেলা পরিষদ থেকে সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের দূরত্ব ৮ কিলোমিটারের কম। অন্যদিকে, বেড়া উপজেলা পরিষদ থেকে সুজানগর উপজেলা পরিষদের দূরত্ব প্রায় ৩৮-৪০ কিলোমিটার। সুতরাং ভৌগলিক বাস্তবতায় সাঁথিয়ার সঙ্গেই বেড়ার সংযোগ সবচেয়ে যৌক্তিক।
২. ভোটার সংখ্যার ভারসাম্য: সাঁথিয়ার (১০টি ইউনিয়ন ১ টি পৌরসভা) ভোটার সংখ্যা: ৩১৭০৩৮ জন। এই সংখ্যা নির্বাচন কমিশনের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে, বেড়া-সুজানগর একত্র করলে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪৬২৭৬৭ জন, যা অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অতিরিক্ত।
৩. নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা: নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী ভোটার পার্থক্য সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে। বেড়া ও সুজানগর একত্র করলে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি হয়ে যায়, যা নীতিমালা বহির্ভূত।
৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতির মিল: সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার জনগণের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারা এক ও অভিন্ন। তাই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও সাঁথিয়া-বেড়ার সংযুক্তিই যৌক্তিক।
৫. নদীবন্দর ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: বেড়া উপজেলায় ৩টি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে: বেড়া পোর্ট, নগরবাড়ি ঘাট, কাজিরহাট ঘাট, পূর্বের সীমানায় ১টি বন্দর পাবনা-১ এ এবং ২টি বন্দর পাবনা-২ এ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ভারসাম্যপূর্ণ। যদি সুজানগরের সঙ্গে বেড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়ন যুক্ত করে দিলে ৩টি নদীবন্দরই পাবনা ২ সুজানগরে চলে যায়, অন্যদিকে, সাঁথিয়া উপজেলার কোন নদী বন্দর থাকে না যার কারণে কোন উন্নয়ন হবে না। সাঁথিয়ার সঙ্গে বেড়ার সড়ক যোগযাযোগ দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার আর বেড়া উপজেলা থেকে সুজানগর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সুতরাং একজন সাধারন নাগরিকের জন্য, তাই প্রশাসনিক বা দাপ্তরিক কাজ করা খুবই কষ্টকর।
৬. প্রশাসনিক ভারসাম্য: বেড়া আংশিক সুজানগর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হলে সুজানগরে ২টি পৌরসভা ও ১৯ টি ইউনিয়ন হবে। অন্যদিকে, সাঁথিয়া উপজেলাতে মাত্র ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। যা সুজানগর উপজেলার অর্ধেক হয়। সুতরাং সাথিয়া উপজেলার চেয়ে সুজানগর উপজেলা দ্বিগুন হয়। যা কোনোমতেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে প্রশাসনিক সেবায় অসামঞ্জস্যতা তৈরি হবে।
৭. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: অতীতেও ৪০ বছরের ইতিহাসে নির্বাচন কমিশন ভৌগলিক বাস্তবতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যোগাযোগের সুবিধা বিবেচনা করে পাবনা-১ (সাঁথিয়া বেড়া আংশিক) ও পাবনা-২ (সুজানগর+ বেড়া আংশিক) নির্ধারণ করেছিল। যাহা ছিলো সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত ও বাস্তব সম্পূর্ণ।
এলাকাবাসী জানান, ভৌগলিক অবস্থান, ভোটার ভারসাম্য, নীতিমালা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, নদী বন্দর, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো ও ঐতিহাসিক বাস্তবতা বিবেচনায় সাঁথিয়া আংশিক বেড়া পুনর্বহালই একমাত্র যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধান।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে সারাদেশের অনেক জায়গাতে সীমানা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু সংশ্লিষ্ট আসনের এলাকাবাসীরা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোযারুল ইসলাম সরকার জানান,সীমানা পুণঃনির্ধারণে ইসি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। এ নিয়ে আদালতে বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
এমওএস/এএমএ/জেআইএম