অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে ‘কালো ছায়া’ দেখছেন উল্লেখ করে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক সভায় থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভা আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া এবং জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটা পায়তারা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন
- পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: তারেক রহমান
- নির্বাচন কেন দেরি হবে তার ব্যাখ্যা তো দিতে হবে: নজরুল ইসলাম
- খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সহজ করবে: ফখরুল
তিনি বলেন, হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গঠন করার যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, সেখানেও একটি ‘কালো ছায়া’ এসে দাঁড়াচ্ছে।
‘বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু হয়েছে। এখানে গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করা হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি, কিছু মানুষ যারা সরকারের মধ্যে অনুপ্রেবশ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।
গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই সময়টা অত্যন্ত মূল্যবান সময় বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপরে সবসময় গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলবার দায়িত্ব।
‘সেই দায়িত্ব হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার কাজ করতে শুরু করেছিলেন, এখন যে তরুণ নেতা নতুন স্বপ্নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের সব স্বপ্নকে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে।
দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন কেউ কখনো কেড়ে নিতে না পারে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যেন কেউ কখনো বিনষ্ট করতে না পারে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কেউ যেন কখনো ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার দিয়ে দাবিয়ে রাখতে না পারে সেজন্য বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে অতন্দ্র ভূমিকা পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন
- ভোট নিয়ে জনগণকে সতর্ক থাকতে বললেন তারেক রহমান
- করিডোর ও বন্দর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ডিসিশনে যেতে পারে না
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, প্রায় ১৭শ নেতাকর্মীকে অ্যানফোর্স ডিজএপিয়ারেন্সের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আজকে একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকীতে শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করতে চাই। আমরা এভাবে অনুপ্রাণিত হতে চাই যেন সব অপশক্তিকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক, আধুনিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে সভায় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আটদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন রুহুল কবির রিজভী।
কেএইচ/এমকেআর/এমএস