সেই জিলাল হোসেনকে বরখাস্ত করল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

3 hours ago 3
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক প্রথম সচিব (শ্রম) জিলাল হোসেনকে বরখাস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বরখাস্ত করা হয়।  জিলাল হোসেনকে বরখাস্ত করে জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক প্রথম সচিব (শ্রম) থাকাকালে আমেরিকায় একটি পিএইচডি কোর্সে ৪ বছরের শিক্ষা ছুটির আবেদন করেন। আবেদনে তার ফান্ডিংয়ের বিষয়ে ভিন্নরূপ তথ্য পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি ৯ মাসের বেশি সময় বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। বিভাগীয় মামলায় তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এরপর তাকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। বিধায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং প্রস্তাবিত গুরুদণ্ডের বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হয়। সরকারি কর্মকমিশন জিলাল হোসেনকে চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ নামীয় গুরুদণ্ডের সিদ্ধান্তের বিষয়ে একমত পোষণ করায় বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) বিধিমতে তাকে পলায়নের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ থেকে চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ নামীয় গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো। জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা ২০১৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গী পাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় শেখ হাসিনার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়ে আর পেছনে ফিরতে হয়নি এই কর্মকর্তার। পদায়ন নেন ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক প্রথম সচিব (শ্রম) হিসেবে। সেখানে গিয়ে প্রায় ২০ ব্যবসায়ীকে মানব পাচারের অভিযোগ এনে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের সম্পদ হাতিয়ে নেন। শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে করা হয় একের পর এক মামলা। এই সময়ে নিজেই ফেসবুকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আদম ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়ীদের সম্পদ আত্মসাৎ এবং আদম ব্যবসার মাধ্যমে প্রায় শতকোটি টাকা উপার্জন করে পাড়ি জমান আমেরিকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রবাসী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে ব্রুনেই হাইকমিশনের ভেতরে আটকে নির্যাতন চালায় জিলাল সিন্ডেকেটের লোকেরা। এ ঘটনার ছয় দিন পর ঘুষ না দেওয়ায় আরেক প্রবাসী কামরুল ইসলামকেও হাইকমিশনের ভেতরে একই কায়দায় নির্যাতন চালায় জিলাল সিন্ডিকেট। ওই নির্যাতনের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ওই ঘটনায় ব্রুনেইয়ে মামলার পর কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও কৌশলে রক্ষা পান জিলাল হোসেন।  অভিযোগ রয়েছে, মালয়েশিয়ার নাগরিক সারা বিনতে আকিল নামে এক ব্যবসায়ী বাংলাদেশের ভিসার জন্য আবেদন করেন ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনে। ২০১৯ সালে দুইবার পাসপোর্টে বাংলাদেশি ভিসার সিল দেওয়ার পরও ঘুষ না দেওয়ায় ভিসার সিল কেটে দেওয়া হয়। পাসপোর্টে ভিসার সিল কেটে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ওই মালয়েশীয় নাগরিক। ভিসার সিল কেটে দেওয়ার অভিযোগটি ভিডিওচিত্র ধারণ করেন মেহেদী হাসান, আবদুল্লাহ আল মামুন অপুসহ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি। এ ঘটনায় আরও ক্ষুব্ধ হন জিলাল হোসেন। এর কয়েক দিন পরই মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে মানব পাচার, শ্রমিক নির্যাতন, হাইকমিশনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য, মানহানিকর ভিডিওচিত্র তৈরি করে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে পাসপোর্ট বাতিলের আবেদন করে চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হাইকমিশনের চিঠিতে মেহেদীর নামে ৫০টির বেশি শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। এর ২৫ দিন পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়, মেহেদী হাসানের নামে শতাধিক শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছে। অথচ ঘুষের প্রতিবাদ করার আগে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। ঘুষ দাবির প্রতিবাদ করার পরই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় এসব ভয়ংকর অভিযোগ।
Read Entire Article