কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) ও সংরক্ষিত বন কেটে চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ তৈরিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একজন সচিবসহ ১০ সরকারি কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)।
বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না এ লিগ্যাল নোটিশ গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠান। নোটিশে বিবাদী কর্মকর্তারা হলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তা।
নোটিশ হাতে পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ জানানোর জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে। অ্যাডভোকেট এস হাসানুল বান্না গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নোটিশে বলা হয়, দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। পরিবেশগত তাৎপর্য বিবেচনায় এ উপজেলার সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর এলাকা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ এলাকায় প্রাকৃতিক বন ও গাছ কর্তন, উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসের সব কার্যক্রম এবং ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
এছাড়া উপজেলার গোরকঘাটা ও চরণদ্বীপ বন রেঞ্জে ৪ হাজার ১৪২ হেক্টর সংরক্ষিত বন রয়েছে। এসব বন দখল করে চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ তৈরি অব্যাহত আছে।
হাসানুল বান্না জানান, এসব প্যারাবনে ২৫০ প্রজাতির মাছ, ১৫০ প্রজাতির শামুক ও ঝিনুক, ৫০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪০ প্রজাতির চিংড়ি, ১৭০ প্রজাতির পাখি, ৫০ প্রজাতির বালিয়াড়ি উদ্ভিদ, ১৫ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, ৩ প্রজাতির ডলফিন, সামুদ্রিক কাছিম, মেছো বাঘ, শিয়াল, সাপ, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস ছিল। যার অর্ধেকেরও বেশি এখন বিলুপ্ত।
নোটিশে বলা হয়, সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন ধ্বংস করে অন্তত ৫০টি চিংড়ি ঘের তৈরি করা হয়েছে। একইভাবে ঘটিভাঙ্গা ও বড়ো মহেশখালী মৌজায় করা হয়েছে ১৫টি ঘের। প্রতিটি ঘের গড়ে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৫০০ একর বনভূমি ধ্বংস করে। বনবিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, গোরকঘাটা ও চরণদ্বীপে প্রায় ১০ হাজার ৫৬৩ একর প্যারাবন দখল হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি ও লবণ চাষ এবং স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নীতিমালায় প্যারাবন সংরক্ষণে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ নিয়ে সুপ্রীমকোর্টের একাধিক রায় ও আদেশ রয়েছে। তারপরও মহেশখালীসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে উপকূলীয় প্যারাবন ও সৃজিত সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস করে চিংড়ি চাষ, লবণ চাষ ও স্থাপনা নির্মাণকাজ অব্যাহত আছে। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও অবজ্ঞার পরিচায়ক। আদালত অবমাননার শামিলও বটে।
নোটিশে মহেশখালী উপজেলায় বিদ্যমান সব প্রাকৃতিক ও সৃজিত প্যারাবনে গড়ে ওঠা চিংড়ি ও লবণ চাষ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বনভূমিতে বিদ্যমান সব অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদের জোরালো দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে উপজেলায় প্যারাবন ধ্বংস করে গৃহীত সব উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলেরও অনুরোধ করা হয়।
এফএইচ/এমকেআর